চিকেনের হরেকরকম পদ, অমনি জিভে জল এসে গেল তাই না। ঠিকই ধরেছেন মটনের সঙ্গে একটা রইসি ব্যাপার স্যাপার জড়িয়ে থাকলেও চিকেন কিন্তু অনবদ্য। যেখানে যেমনটি রাখবেন তাতেই সে ঘর আলো করে প্রত্যেক বাসিন্দার মনে সুখ এনে দেবে। তা স্টু দিয়েই হোক বা ঝালেঝোলে অম্বলে। আর রেস্তরাঁতে(Restaurant) গেলে তো কথাই নেই, চিকেন ভর্তা, চিকেনকষা, আফগানি চিকেন, তন্দুরি চিকেন, চিকেনের হরেক রকম কাবাব, চিলি চিকেন(Chilli chicken), চিকেন মাঞ্চুরিয়ান(chicken manchurian), গার্লিক চিকেন, লেমন চিকেন, মালাই চিকেন(Malai Chicken)। এতশত চিকেনের পদের হদিশ পেয়ে মনটা নিশ্চই উড়ুউড়ু। আরে আরে দুঃখ পাবেন না।
মোগলাই খানার স্বাদ পেতে এবার আর ট্রেন বা বিমান ঠেঙিয়ে রাজধানী নয়, কলকাতাতেই হাতের নাগালে রাজকী. রেসিপি হাজির। শুধু সময় করে টেবিলটা বুক করলেই হল। তাহলেই রসনাতৃপ্তির অমোঘ সুযোগ চলে আসবে মুঠিতে। এখনও বুঝতে পারেননি তো, দিল্লির সুবিখ্যাত রেস্তরাঁ মোতিমহল এখন কলকাতার পার্কস্ট্রিটে। রসিক বাঙালির মন জয় করতে মোতিমহলের এই আগমন সিটি অফ জয়কে সুখের দরজা দেখিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহই নেই। চলুন একবার মোতিমহলের (Moti Mahal Delux)অন্দরে উঁকি মারি।
একটা সময় দিল্লির (Delhi)সাউথ ব্লকের মানুষের কাছে ‘মোতিমহল’ এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, নেহরু সরকারের যত বিদেশি অতিথি আসতেন, তাঁদের মেনুতে ওই রেস্তোরাঁর বাটার চিকেন(Butter chicken)ছিল মাস্ট। সেই চিকেন না খুব ঝাল, না বেশি মিষ্টি। মাখন, টোম্যাটো, ঘন ক্রিমের স্পর্শে তন্দুর চিকেন যেন মোহময়ী হয়ে ওঠে। এই স্বাদ পেতে শুধু দেশের নয় বিদেশের বড়বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন, থাকেনও। আজকের মোতিমহলের মালিক মণীষ গুজরাল, খ্যাতির জোয়ারে ভাসলেও শুরুটা বেশ কঠিন ছিল। রেস্তরাঁর প্রতিষ্ঠাতা তথা মণীষবাবুর দাদু কুন্দন লাল(Kundan Lal) ছিলেন হোটেলকর্মী। অল্প বয়সে বাবাকে হারিয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়ে। সেই সময় পেশোয়ারের এক মোগলাই কানার রেস্তরাঁতে কাজ নেন তিনি।
মালিক কুন্দনকে বেশ পছন্দই করতেন, তাঁর আগমনে খরিদ্দারের সংখ্যাও বাড়ছিল। এদিকে খাবারদাবারের জোগানও কম ছিল না। সব থাকলেও ফ্রিজের কোনও সুবিধা সেসময় পাননি কুন্দন। তাই তন্দুরি চিকেন থেকে গেলে তার বেশিটাই ফেলা যেত। এসব নিয়ে মালিকের চিন্তার অন্ত ছিল না, কুন্দনকে ডেকে একদিন এর সমাধানের রাস্তা বের করার অনুরোধও করেন তিনি। কুন্দনও হাল ছাড়ার পাত্র নন। তন্দুর চিকেন থেকে গেলে সেটাকে কী উপায়ে সুস্বাদু ও ভিন্ন রেসিপিতে বদলে দেওয়া যায় তা ভাবতে ভাবতেই বানিয়ে ফেললেন মালাই চিকেন। সব ভালোই চলছিল, কুন্দনের আবিষ্কারে মালিকও খুশি। কিন্তু গোল বাধাল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি। ৪৭ সালভারত ভেঙে স্বাধীনতা এসেছে। পরিবার নিয়ে এদেশের বাসিন্দা হলেও কুন্দনের রুটিরুজির হোটেল চলে গিয়েছে পাকিস্তানে। ক আর করা যাবে ভাগ্যাণ্বেষণে একসময় গোটা পরিবার নিয়েই দিল্লি চলে এলেন তিনি। দরিয়াগঞ্জে খুলে বসলেন মোতিমহল। বাটার চিকেনের দৌলতে সেই নাম ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এরপর মোতিমহলের আউটলেট তৈরি হয়। দুবাই,(Dubai) সিঙ্গাপুরে(Singapore)ও রাজ করছে কুন্দনের সাধের রেস্তরাঁ এবার সেই মোতিমহল কলকাতার পার্কস্ট্রিটে।
ছুটির দিন সঙ্গিনীকে চমকে দিতে চলে আসুন পার্ক সেন্টারের দোতলায় সেখানেই রয়েছে মোতিমহল ডিলাক্স। মোগলাই খানার স্বাদ নিন, সাইড ডিশ হিসেবে বাটার চিকেনকে সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না যেন। এর এমনই মাহাত্ম্য যে রাজীব-সঞ্জয়ের (Rajib & Sanjay Gandhi)টিফিনেও বাটার চিকেন দিতেন ইন্দিরা গান্ধী(Indira Gandhi)। এবার কলকাতায় বসেই সেই স্বাদ পেতে পারেন আপনি।