ভালো করে ভেবে বলুন তো, মা কালীকে (Maa Kali) কখনও মদ (Alcohol) খেতে দেখেছেন? মা কালীর রূপের যে বর্ণনা পাওয়া যায়, তাতে কোথাও কি এমন উল্লেখ মেলে যেখানে দেবীকে মদ্যপান করতে দেখা যায়? শাস্ত্র কিন্তু কখনই কালীপুজোয় সরাসরি মদ খাওয়ার কথা বলা নেই। এমনকী, মা কালী মদ খান এমন উল্লেখও কম। তাহলে কালীপুজোর (Kali Puja) নৈবেদ্য হিসেবে মদ বা কারণসুধা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠল কীভাবে? এর উত্তর খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে সদ্য পার হয়ে যাওয়া দুর্গা পুজোর (Durga Puja) ব্যাখায়। যুদ্ধে মহিষাসুর (Mahisasur) অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করলে দুর্গা তাঁকে বলেছিলেন, “গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম/ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।" অর্থাৎ, “রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। তারপরে আমি তোকে বধ করলেই, দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন!” এক্ষেত্রে মধু কিন্তু মোটেও কোমল পানীয় (Soft Drink) নয়। সংস্কৃতে 'মদে'র একটি প্রতিশব্দ 'মধু। (Honey)'
'ব্রহ্মযামল তন্ত্র' অনুযায়ী, বঙ্গদেশের (West Bengal) অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী। বঙ্গে কালীর যে রূপটির সর্বাধিক পুজো হয় তা হল দক্ষিণাকালী বা শ্যামাকালী। এই দেবী কী পান করতে অভ্যস্ত? ইনি রক্তপান (Drinking Blood) করেন না। খড়্গ দিযে সিদ্ধকালী আঘাত হানেন চাঁদে (Moon)। সেই চাঁদ থেকে নিঃসৃত অমৃত পানে তুষ্ট হন দেবী। অন্যদিকে, চণ্ড-মুণ্ড বধের সময় দেবী কৌষিকীর ভ্রুকুটিকুটিল ললাটদেশ থেকে উৎপন্না হয়েছিলেন যে কালী , তিনিও পান করেন কেবল রক্তই। যুদ্ধে তিনি রক্তবীজ সহ অনেক অসুরবীরেরই রক্ত পান করে তাদের বলহীন করে তুলেছিলেন। মদ-সহকারে যে তন্ত্রসিদ্ধ পূজা পদ্ধতি বঙ্গের বুকে প্রবর্তন করেছিলেন তিনি ঋষি বশিষ্ঠ (Basista)। জনশ্রুতি বলে, বশিষ্ঠ হাজার হাজার বছর তপস্যা করেও সিদ্ধি অর্জন করতে পারছিলেন না। তখন তিনি বিষ্ণুর নির্দেশে রওনা দেন চীনদেশে (China)। দেবী তারার উপাসনা পদ্ধতি আয়ত্ত করার জন্য। সেখানে গিয়ে বশিষ্ঠ দেখেন, সেখানে পঞ্চ ম কার অর্থাৎ মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন সহকারে তন্ত্রমতে দেবী আরাধনা করা হয়। সেই সাধন পদ্ধতিই বশিষ্ঠ নিয়ে আসেন বঙ্গে। পণ্ডিতদের বক্তব্য, বৈষ্ণবদের পঞ্চগব্য অর্থাৎ দধি-দুগ্ধ-ঘৃত-গোমূত্র-গোময়ের ঠিক বিপরীতেই অবস্থান করে শাক্তদের মদ্য-মাংস-মৎস্য-মুদ্রা-মৈথুন। আরও পড়ুন: Deepavali 2019: বাজার দখল চিনের, ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপ
লোকনাথ বসু তাঁর 'হিন্দুধর্ম মর্ম' গ্রন্থে লিখছেন, পঞ্চ ম কারের প্রথমটি অর্থাৎ মদ কেবল পানীয় (Drink) নয়। এটি আসলে ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে ক্ষরিত অমৃতধারা বা সাক্ষাৎ আনন্দ। তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত হলে খুলে যায় মস্তিষ্কের উপরিতল বা ব্রহ্মরন্ধ্র। তখন যে আনন্দধারা প্রবহমান হয়, তাই আসলে মদ্য বা কারণ। উল্লেখ্য, কার্ত্তিক মাসের অমাবস্যা তিথির এই কালী পুজো দীপান্বিতা কালীপুজো নামে খ্যাত।