ফাইল ফোটো

কলকাতা, ২৩ অক্টোবর: আগামী রবিবার কালীপুজো (Kali puja)। আলোর উৎসব দীপাবলি (Deepavali)। কালীপুজোর রাতে মাটির প্রদীপ আমাদের আজও নস্ট্যালজিক করে তোলে। মাটির প্রদীপের আদলে নির্মিত চিনের প্রদীপ বাজার কেড়ে নিয়েছে মাটির তৈরি প্রদীপের। আর তাতেই কয়েক বছর ধরে মাথায় হাত পড়েছে মৃৎশিল্পীদের (Pottery artist)। কালীপুজো ও দীপাবলির প্রস্তুতি তুঙ্গে থাকলেও প্রদীপের চাহিদা না থাকায় চিন্তিত রাজ্যের প্রদীপ শিল্পীরা। কারণ দীপাবলীতে আগে মাটির প্রদীপের চাহিদা ছিল এখন বিভিন্ন রকমের ইলেকট্রিক ল্যাম্প উঠে যাওয়ায় লাটে উঠতে চলেছে মাটির প্রদীপ। যাদের তৈরি প্রদীপের আলোয় ঝলমল করত দীপাবলির রাত।, সেই মৃৎ শিল্পীদের ঘরই আজ অন্ধকার। কারণ প্রদীপের জায়গা কেড়েছে বৈত্যুতিক মোমবাতি, টুনি লাইট ও এলইডি।

আগে একটি মৃৎশিল্পীর পরিবারের সকলেই মাটির প্রদীপ সহ অন্য জিনিস তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে। মৃৎশিল্পীরা দীপাবলিকে সামনে রেখে ব্যস্ত নানা ধরনের প্রদীপ তৈরি করতে। বেশ কয়েকজন মৃৎশিল্পীর গলায় আক্ষেপের সুর। তারা বলেন, আজকালকার ডিজিটাল যুগে যে হারে চায়না লাইট, টুনি বাল্ব ও নানা ধরনের এলইডি লাইট এসেছে, সেই তুলনায় হাতে গড়া মাটির প্রদীপের বিক্রি কমেছে। তাদের দাবি, বর্তমানে মাটি ও খড়ির দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রদীপের দাম বাড়ছে না। বিক্রিবাটা করে কোনও রকমে খরচটা ওঠে। কালীপুজো এলেই ঘর আলো করতে মাটির প্রদীপের চাহিদা বেশ থাকত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে গৃহস্থরা ঝুঁকেছেন তুলনায় সস্তা এবং বাহারি বৈদ্যুতিক আলোর দিকে। এই পরিস্থিতিতে কালিপুজোর মুখে চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা। মাটির প্রদীপের কদর কমতে থাকায় এই কাজ ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছেন। আলোর উৎসব তথা দীপাবলীতে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপ। তবে এই প্রদীপের চাহিদা কমলেও হাল ছাড়েননি অনেক মৃৎশিল্পীই। বাপ-ঠাকুরদার দেখানো পেশা ছেড়ে যেতে মন চাইছে না তাদের। তবে ছেলে-মেয়েরা অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে প্রদীপের চাহিদা কমার কারণে। কারণ না হলে যে সংসার চলবে না। আরও পড়ুন:  Kali Puja 2019: বিলিতি খড়্গ দিয়ে বলি হয় কলকাতার এই বনেদী বাড়িতে; বউবাজারের হালদার বাড়িতে তিনশো বছর ধরে পূজিতা হন মা কালী

শারদীয় ও দীপাবলির সময় মাটির প্রদীপের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। অনেক শিল্পীর দাবি, যতই নানান ধরনের আলো বাজারে আসুক না কেন আজও মাটির প্রদীপের চাহিদা কিন্তু আগের মতোই। এক ট্রাক মাটি কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। সেই মাটি দিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার প্রদীপ তৈরি হয়। প্রদীপ বানানোর পর রঙের প্রলেপ দিয়ে আগুনে পোড়ানোর খরচও রয়েছে। এদিকে আকাশছোঁয়া দাম নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের। তাই প্রদীপ বিক্রির পরেও লাভের মুখ তেমন দেখতে পান না শিল্পীরা। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়। অনেক মৃৎশিল্পীর দাবি, এই কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। একটা সময় এই কুটির শিল্পের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া যেত। কিন্তু আজ আর সেই ব্যাঙ্ক ঋণের টাকাও শিল্পীরা পান না। ফলে পূর্ব পুরুষদের এই পেশায় বর্তমান প্রজন্মের কেউ আর এগিয়ে আসতে চাইছেন না। তবে আগামীদিনে মাটির প্রদীপের চাহিদা আবারও বাড়বে বলে আশা মৃৎশিল্পীদের।