প্রতীকি ছবি (Photo Credits: Facebook)

কলকাতা, ২২ অক্টোবর: কালীপুজো (Kali Puja) সমাগত। বাংলা (West Bengal) জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে শ্যামা আরাধনার প্রস্তুতি। থিম পুজোর (Theme Puja) জন্য যেমন সেজে উঠছে মণ্ডপ; তেমনই যেসব বনেদী বাড়িতে মা কালীর আরাধনা হয় সেই সমস্ত বাড়িতেও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলছে প্রস্তুতি। প্রত্যেক বনেদী বাড়ির পুজোরই কোন না কোন আলাদা মাহাত্ম্য থাকে। তেমনই রয়েছে বউবাজারের (Boubazar) হালদার বাড়িতে (Halder Bari)। তিনশো বছরের ঐতিহ্যবাহী হালদার বাড়ির কালী পুজোয় বিলিতি খড়্গ (Sword) দিয়ে হয় বলি। প্রথা অনুযায়ী, কালী পুজোতে পাঁঠা বলির চল ছিল। ১৯৪২ সালে দাঙ্গার পর থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। তার বদলে চাল কুমড়ো, শসা, আখ বলি দেওয়া হয়। এই বলিদান পর্ব এখনও হয়ে থাকে মশালের আলোয়। সাতেরো শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে এই বাড়ির পূর্বপুরুষ লক্ষ্মীনারায়ণের (Laxminarayan)হাত ধরে শুরু হয় পুজো।

লক্ষ্মীনারায়ণ হালদার ছিলেন বাদলা গ্রামের জমিদার। কলকাতায় লক্ষ্মীনারায়ণের বাবার প্রচুর জমিজমা থাকার সুবাদে তিনি কলকাতায় (Kolkata) এসে ব্যাবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকায় ইংল্যান্ড (England) থেকে সরাসরি জিনিসপত্র আমদানি করতেন তিনি। ব্যবসা ভালো হওয়ায় হালদাররা হয়ে ওঠেন কলকাতার সব থেকে বড় ব্যবসায়ীরদের অন্যতম। ফলে হালদার বাড়ির কালী পুজোর জাঁকজমক আরও বাড়তে থাকে। বছরের বিভিন্ন তিথিতে বিভিন্ন পুজোর আয়োজন করা হয় হালদার বাড়িতে। তার মধ্যে প্রধান দুটি পুজো হল দুর্গাপুজো (Durga Puja) এবং কালীপুজো। তবে দুর্গাপুজো শুরু হওয়ার আগে থেকে এই বাড়িতে কালীপুজো শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। এছাড়া মোমবাতির (Candle) আলোয় কালী পুজোর আয়োজন করা হয়। কালীপুজোর রাতে বাড়ির সমস্ত বিদ্যুতের আলো (Light) নিভিয়ে মোমবাতির আলোয় সারা বাড়ি সাজিয়ে তোলা হয়। আরও পড়ুন: কালী পুজো ২০১৯: নিষিদ্ধ হল চিনা বাজি, ফানুসেও আপত্তি কলকাতা পুলিশের

কুমারটুলি (Kumartuli) থেকে মৃৎশিল্পী এসে হালদার বাড়িতে প্রতিমা নির্মাণ করেন। শিল্পী কাশী পাল বংশ পরম্পরায় প্রতিমা বানিয়ে চলেছেন এই বাড়িতে। কৃষ্ণনগর (Krishnanagar) থেকে শিল্পী এসে ডাকের সাজে প্রতিমা সাজিয়ে থাকেন। তবে কালী প্রতিমার কাঠামো পুজো হয়ে যায় দুর্গাষ্টমীর দিনই। মূর্তি গড়া শুরু হয়ে যায় কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন থেকে। জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত ইস্পাত উৎপাদনকারী সংস্থা শেফিল্ডের মালিক জন ইয়েটস হালদার বাড়ির এই কালী পুজো দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনিই খুশি হয়ে জাহাজে করে তাঁর কোম্পানির ইস্পাত দিয়ে তৈরি দুটি খড়্গ পাঠিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ছিল বেশি ওজনের, দেখতে রুপো নির্মিত খড়গের মত। কালীপুজোর রাতে এই খড়্গই ব্যবহার করা হয়।

(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবর অনুযায়ী)