থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক রোগ, এটি এক ধরনের রক্তের ব্যাধি। সাধারণত পিতা-মাতার কাছ থেকে সন্তানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। এই রোগটি শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, শরীরে রক্ত তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে এই রোগ। এর ফলে রক্তশূন্যতার লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায় শরীরে। যেকোনও শিশুর জন্মের তিন মাস পরই দেখতে পাওয়া যায় থ্যালাসেমিয়ার লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে রক্তের অভাব দেখা দেয়, যার কারণে বারবার প্রয়োজন হয় রক্তের। পিতা-মাতা উভয়ের জিনে মাইনর থ্যালাসেমিয়া থাকলে মেজর থ্যালাসেমিয়ায় ভুগতে পারে সন্তান, যা খুবই বিপজ্জনক। পিতা-মাতা দুজনের মধ্যে যেকোনও একজনের মাইনর থ্যালাসেমিয়া থাকলে কোনও ঝুঁকি থাকে না সন্তানের। তাই বিয়ের আগে নারী-পুরুষ উভয়েরই রক্ত পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা WHO-এর মতে, প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর জন্ম হয় ভারতে। দেশের রাজধানী দিল্লি ও তার আশপাশের এলাকায় থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫০০। মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। তথ্য অনুযায়ী, আলফা গ্লোবিন এবং বিটা গ্লোবিন, এই দুই ধরণের প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয় হিমোগ্লোবিন। এই প্রোটিনে গ্লোবিন তৈরির প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণে হয় থ্যালাসেমিয়া, যার কারণে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় লোহিত রক্ত কণিকা। রক্ত স্বল্পতার কারণে রোগীকে বারবার রক্ত দিতে হয়, যার ফলে শরীরে জমতে শুরু করে আয়রন, যা হতে পারে হার্ট, লিভার ও ফুসফুসের জন্য বিপজ্জনক।

থ্যালাসেমিয়া হয় দুই প্রকারের, থ্যালাসেমিয়া মেজর এবং থ্যালাসেমিয়া মাইনর। থ্যালাসেমিয়া মেজরের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়ের জিনে থাকে থ্যালাসেমিয়া, এর ফলে সন্তানের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। পিতা-মাতার মধ্যে যেকোনও একজনের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া থাকলে সন্তানের হয় থ্যালাসেমিয়া মাইনর, এমন পরিস্থিতিতে সন্তানের থ্যালাসেমিয়ার ঝুঁকি কম থাকে। জন্ডিসের লক্ষণ সহ শিশুদের নখ ও জিহ্বা হলুদ হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যায় থ্যালাসেমিয়াতেও। এছাড়া শিশুদের চোয়াল এবং গালে দেখা দেয় লাল ফুসকুড়ি। মুখের শুষ্কতা, ওজন বৃদ্ধি না হওয়া, সবসময় দুর্বলতা ও শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।