ভারতের শিরা-উপশিরায় চা রয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ভারতীয়দের জন্য, দিনের শুরুটা এক কাপ গরম চা ছাড়া অসম্পূর্ণ। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় এক কাপ চা, অফিসে পৌঁছানোর পর এক কাপ, কাজের মাঝে এক কাপ চা এবং সন্ধ্যার ক্লান্তি দূর করতে এক কাপ চা, এককথায় ভারতীয়দের প্রতিটি মুহূর্তের সাথী এই চা। ভারতীয় চায়ের স্বাদ অনন্য। ভারতীয় মসলা চা সারা বিশ্ব বিখ্যাত। তবে ভারতে চায়ের জনপ্রিয়তা খুব পুরনো নয়। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত, ভারতীয় চায়ের স্বাদও পায়নি অনেকেই। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে এসেছিল চা এবং তারপর থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে ভারতীয় চায়ের স্বাদ। বর্তমানে ভারতীয় চা বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।

চায়ের ইতিহাস চীনের সাথে জড়িত। বিশ্বাস করা হয় যে ২৭৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চীনা শাসক শেং নুং একটি অজানা পরীক্ষার সময় আবিষ্কার করেছিলেন চা। কথিত আছে যে ঘটনাক্রমে একটি বন্য গাছের পাতা ফুটন্ত জলে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি এবং হঠাৎ একটি বিস্ময়কর সুবাস অনুভব করেন, ধীরে ধীরে বদলে যায় জলের রং। কৌতূহল থেকে এই পানীয়টি একবার পান করার পর এত পছন্দ করেছিলেন যে তিনি এটি নিয়মিত পান করতে শুরু করেন। ব্রিটিশদের আগমনের পর ভারতে আসে চা। কিন্তু এর আগেও ভারতে ১২০০ থেকে ১৬০০ সালের মধ্যে চা পান করা হত। আসামের মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলি বনভূমিতে সেই সময়ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে জন্মায় চা।

সিংফো উপজাতি সম্প্রদায় সহ আরও অনেক উপজাতি গোষ্ঠী স্বাস্থ্যগত সুবিধার জন্য পান করত এই বন্য চা। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যপথের কারণে ভারতীয় শহরগুলোতে চা পানের প্রমাণ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৭ শতকের শেষের দিকে গুজরাট শহরের সুরাটের মানুষ পেট ব্যথা এবং মাথা ব্যথার মতো রোগের জন্য চীন থেকে আমদানি করা চা পান করত। ভারতে শিল্প চা উৎপাদনের ইতিহাস ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এবং চীনের মধ্যে সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত। চীনের সঙ্গে চা ব্যবসায় বাধার সম্মুখীন হয়ে আসামের বনাঞ্চলে চা রোপণ শুরু করে ব্রিটিশরা। প্রাথমিকভাবে, বেশিরভাগ ভারতীয় চা রপ্তানির জন্য উৎপাদিত হত এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে খুব কমই পান করা হত।

২০ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারের দিকে মনোনিবেশ করতে হয় চা উৎপাদনকারীদের। সেই সময় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চায়ের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয় এবং ধীরে ধীরে ভারতীয়দের মধ্যে চা পানের অভ্যাস গড়ে ওঠে। ভারতীয়রা চা তৈরির নিজস্ব ভিন্ন ভিন্ন এবং অনন্য উপায় নিয়ে আসে। সাধারনত চা পাতা গরম জলে যুক্ত করার পরিবর্তে সরাসরি জল বা দুধে মিশিয়ে গরম করতে পছন্দ করতেন ভারতীয়রা। ব্রিটিশদের কাছ থেকে দুধ এবং চিনি মেশানোর পদ্ধতি শিখেছিল তারা, কিন্তু তাতেও ভারতীয়রা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে চা তৈরি করত। ভারতীয় চা বিক্রেতারা স্থানীয় মশলা যোগ করে চায়ের স্বাদ বাড়িয়েছে। তারা আদা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ এবং তেজপাতার মতো জিনিস দিয়ে চা তৈরি করত। এই কারণেই ভারতের মসলা চা সারা বিশ্বে বিখ্যাত।