সনাতন ধর্মে বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র নদী বলা হয় গঙ্গাকে। মান্যতা রয়েছে, গঙ্গায় স্নান করলে জীবনের সমস্ত পাপ দূর হয় এবং মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ হয়। গঙ্গা নদীকে ভক্তরা ‘মা গঙ্গা’, ‘গঙ্গা মাইয়া’, ‘গঙ্গা জি’ এবং ‘মা গঙ্গে’ নামে ডাকে। হিন্দু ধর্মে শুদ্ধি ও মুক্তির জন্য ব্যবহৃত হয় গঙ্গার জল। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমী তিথিতে পালন করা হয় গঙ্গা সপ্তমীর উৎসব। দেবী গঙ্গার পুনর্জন্ম স্মরণ করার জন্য পালিত হয় গঙ্গা সপ্তমী।
২০২৪ সালে বৈশাখ সপ্তমী শুরু হবে ১৪ মে, মঙ্গলবার, রাত ০২:৫০ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৫ মে, বুধবার সকাল ০৪:১৯ মিনিটে। উদয় তিথি অনুসারে ১৪ মে পালন করা হবে গঙ্গা সপ্তমীর উৎসব। গঙ্গা সপ্তমীতে পুজো করা হয় মা গঙ্গার। গঙ্গা নদী বা তার উপনদীতে ডুব দিয়ে স্নান করে মা গঙ্গাকে ফুল এবং দুধ অর্পণ করে 'ওম গঙ্গায় নমঃ' মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করতে হবে। সন্ধ্যায় মা গঙ্গাকে প্রদীপ প্রদান করা হয়। মান্যতা রয়েছে গঙ্গা সপ্তমীতে গঙ্গায় প্রদীপ প্রদান করলে জীবনে সৌভাগ্য আসে, জীবন পাপ মুক্ত হয় এবং গ্রহের অশুভ প্রভাব কমতে থাকে।
গঙ্গা সপ্তমী এবং গঙ্গা দশেরা দুটি ভিন্ন উৎসব, যদিও উভয়ই পূজিত হন মা গঙ্গা। ব্রহ্ম পুরাণ এবং অন্যান্য পুরাণ অনুসারে, গঙ্গা যখন তার বিশাল প্রবাহ নিয়ে প্রথমবার পৃথিবীতে এসেছিলেন, তখন ভগবান শিব তার চুলের জটায় গঙ্গাকে ধারণ করে রক্ষা করেছিলেন পৃথিবীকে। পরবর্তীতে, পূর্বপুরুষদের অভিশপ্ত আত্মাদের মুক্তি দেওয়ার জন্য গঙ্গাকে পৃথিবীতে আনতে কঠোর তপস্যা করেছিলেন ভগীরথ। তখন গঙ্গাকে মুক্ত করেছিলেন ভগবান শিব। এটি 'গঙ্গা দশেরা' নামে পরিচিত।
ভগবান শিবের চুলের জটায় থাকা সত্ত্বেও, গঙ্গার অবাধ প্রবাহ পৃথিবীতে পতিত হওয়ায় কিছু জায়গায় ব্যাপক ধ্বংস হয় এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। গঙ্গার এই প্রবাহে ধ্বংস হয়ে যায় ঋষি জাহ্নুর আশ্রম। ঋষি জাহ্নু ক্রুদ্ধ হয়ে গঙ্গার সমস্ত জল পান করে নিয়েছিলেন। রাজা ভগীরথ ও দেবতাদের প্রার্থনার পর ঋষি জাহ্নু বৈশাখ শুক্লপক্ষের সপ্তমীতে মুক্ত করেন মা গঙ্গাকে। এদিন মা গঙ্গার পুনর্জন্ম হিসেবে পালন করা হয় গঙ্গা সপ্তমীর উৎসব।