Deepavali 2019:  দীপাবলিতে হাজার ভিড়ের মাঝেও বাঙালি আজও খোঁজে বুড়িমাকে!
(Photo: Facebook and Pixabay)

কলকাতা, ২৫ অক্টোবর: দীপাবলি (Deepavali) আলোর উৎসব। আলোর রোশনাই সব অন্ধকার দূর করার উৎসব। তাই সারা বছর আমরা আশা করে থাকি দীপাবলিতে আতসবাজি (Fireworks) পোড়ানোর। জল ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না তেমনি আতসবাজি ছাড়া দীপাবলি ঠিক জমে না। বাজির বাজারে এখন দক্ষিণ ভারতীয় থেকে শুরু করে চিনা বাজির রমরমা। কিন্তু এসবের মধ্যেও বাঙালি মনে রেখেছে বুড়িমাকে (Burima)। হ্যাঁ, এই বাঙালি ব্যবসায়ীর বাজির রোশনাই আজও হাসি ফোটায় আমাদের মুখে। হাওড়া (Howrah) জেলার বেলুড়ে (Belur) বুড়িমা সংসারের অভাব অনটনের সঙ্গে যুঝতে হাতে তুলে নিয়েছিলেন বাজি বানানোর মশলা। অন্নপূর্ণা দাস ওরফে সকলের বুড়িমা ধীরে ধীরে বিখ্যাত হন তাঁর আতসবাজির জন্য। তাঁর তৈরি 'বুড়িমার চকলেট বোমা' অনেক বাঙালির ছোটোবেলার নস্ট্যালজিয়া। তবে পরবর্তীকালে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হওয়ায় চকলেট বোমা আর বানানো না হলেও বুড়িমার বাজি বাংলা তথা ভারতের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু কখনও কি জানতে চেয়েছেন এই বুড়িমা কে। কেনই বা তিনি হঠাৎ বাজি তৈরি করতে গেলেন। তবে চলুন জেনে নিই কে ছিলেন এই বুড়িমা।

বুড়িমা নামটি এসেছে ওনার চেহারার একটি আদলের জন্য। স্থানীয় লোকজন অসুস্থ হলে তাদের পরামর্শ দিতেন অন্নপূর্ণা দাস (Annupurna Das)। সেই থেকে বুড়িমা হিসেবে পরিচিতি তাঁর। ১৯৬৫ সাল থেকে তাঁর এই পথচলা। আদতে বাংলাদেশের (Bangladesh) ফরিদপুর (Faridpur) জেলার মেয়ে অন্নপূর্ণা দাস দেশভাগের সময় ভিটেছাড়া হন। এরপর পশ্চিম দিনাজপুর জেলার ধলদিঘি সরকারি ক্যাম্পে তিনি চলে আসেন। উদ্বাস্তুদের পার্মানেন্ট লায়াবিলিটি ক্যাম্প থেকে হাওড়া জেলার বেলুড়ে পার্মানেন্ট ঠিকানা হওয়ার মাঝে ছিল অনেক লড়াই। হ্যাঁ, সেই গরিব ঘরের লড়াকু মেয়েই পরবর্তী জীবনে সফল ব্যবসায়ী 'বুড়িমা'। স্বামী সুরেন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর দুই সন্তানকে নিয়ে ভারতে এসে রিফিউজি ক্যাম্পে চলে আসেন। পরে কাঁচা সবজি বিক্রি শুরু করেন। কয়েকবছর পর ধলদিঘি থেকে গঙ্গারামপুরে চলে যান অন্নপূর্ণাদেবী। তার আগে তিনি কিছুদিন বিড়ি বাঁধার কাজ করতেন। আর সেই কাজ করতে করতেই শুরু করে দেন বিড়ির ব্যবসা। এরপর অনেক চেষ্টাচরিত্র করে নিজের বিড়ি কারখানা গড়ে তোলেন। আরও পড়ুন: Deepavali 2019: বাজার দখল চিনের, ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মাটির প্রদীপ

বেশ কয়েক বছর পর অন্নপূর্ণাদেবীর মেয়ের বিয়ে হয় হাওড়ার বেলুড়ের প্যারিমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে। সেখানেই দোকান-সহ বাড়ি কিনে বিড়ির সাথে আলতা, সিঁদুর, ঘুড়ি, দোলের রং, কালীপুজোর বাজির ব্যবসা শুরু করেন। নিজে তৈরি না করলেও বেশ লাভে বিক্রি করতেন। ব্যবসা পসার পেতে সময় লাগেনি। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন অচিরেই। বুড়িমার পরে তাঁর ছেলেরা হাল ধরেন। এখন নাতি সুমন দাস এবং তাঁর ছেলে সুমিত দাস ব্যবসা দেখেন। বেলুড়ে বুড়িমার বাড়িতেই এখনও বিক্রি হয় বাজি। সেখান থেকেই বাজি কিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন বিক্রেতারা। ছেলে সুধীরনাথ মায়ের ব্যবসায়ে আতসবাজিও বানানো শুরু করেছিলেন। কিন্তু বুড়িমা ব্র্যান্ডে বিখ্যাত হয় 'বুড়িমার চকলেট বোম'। বর্তমানে ব্যবসার হাল ধরেছেন বুড়িমার চতুর্থ প্রজন্ম সুমিত দাস।