বড় প্রজেক্ট পাস হয়েছে। কাজের চাপ কমতেই মনটা ছুটি চাইছে তো, এই উইকএন্ডে বেরিয়ে আসুন না বাড়ির কাছের এই জায়গায়। কাছেপিঠে বেড়াতে যাওয়ার হদিশ নিয়ে আজ দ্বিতীয় পর্বে রইল চন্দননগরের কথা।
চন্দননগর(Chandannagar)
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৭ কিমি দূরে অতীতের ফরাসি কলোনি আজকের চন্দননগর। গঙ্গার তীরে শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশ। নদীর তীরে ভূ-কৈলাসের রানির তৈরি পাথরে বাঁধানো স্ট্র্যান্ড। লাগোয়া বিদ্যাসাগর ও রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত মোরাম সাহেবের তৈরি পাতালবাড়ি আজও স্মৃতি রোমন্থন করায়। উল্টো দিকে অল্প উত্তরে সেন্ট জোসেফ কনভেন্ট, পাশেই ফরাসিদের তৈরি ইন্সতিতিউত দে চন্দেরনগর, এক কালের দ্যুপ্লে প্যালেস, আজকের চন্দননগর মিউজিয়াম। ফরাসি রাজত্বের নানা স্মারক অতীতে নিয়ে যায়। মিউজিয়াম ছাড়াও রয়েছে ফরাসি ইনস্টিটিউট, রোমান ক্যাথলিক চার্চ, সমাধিভূমি, দ্যুপ্লে কলেজ (বর্তমানে কানাইলাল বিদ্যামন্দির), রবীন্দ্র ভবন, নন্দদুলাল, বিশালাক্ষী ও দেবী ভুবনেশ্বরীর মন্দির। ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক। হাওড়া বর্ধমান মেন লাইনে যেকোনও লোকাল ট্রেন ধরে চন্দননগর পৌঁছে যেতে পারেন। গঙ্গার পাড়ে বসে ইতিহাসকে অনুভব করতে চাইলে একটা রাত তো কাটাতেই হবে। থাকার জায়গা বলতে রয়েছে চন্দননগর পুরসভার অতিথিগৃহ। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বেসরকারি হোটেল আছে। চন্দননগরের প্রধান আকর্ষণ আলোর রোশনাইয়ে রাঙানো জগদ্ধাত্রী পুজো। ভদ্রেশ্বর থেকে চন্দননগর পর্যন্ত প্রায় শতাধিক পুজো হয়।চাইলে সেসময়ও আসতে পারেন এই ইতিহাসের শহরে।
বিষ্ণুপুর(Bishnupur)
বিষ্ণুপুরী ঘরানার রাগসংগীতে যেন মাধুর্যের মূর্চ্ছনা লাল মাটির সরানে টেরাকোটা শিল্পকে আরও বেশি করে উজ্জীবিত করেছে। সেই রাগসংগীত মিশে গিয়েছে বালুচরী-স্বর্ণচরীর কারুকাজে। সবমিলিয়ে ইতিহাসের গন্ধমাখা অনন্য বিষ্ণুপুর। টেরাকোটার কাজ আর ঐতিহ্যবাহী বিষ্ণপুর সিল্কে শাড়ি কিনতে শুধু বাংলা নয় গোটা ভারত এমনকী বিদেশ থেকেও পর্যটক আসছে বাঁকুড়ায়।বিষ্ণুপুরের মতো পুরাকীর্তিবহুল স্থান পশ্চিমবঙ্গে খুব কমই আছে।কিংবদন্তি অনুযায়ী খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক নাগাদ বিষ্ণুপুরে মল্লরাজ বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল মল্লভূম, প্রায় এক হাজার বছরের দীর্ঘ রাজত্বকালে মল্লরাজবংশের হাত ধরে শিল্প-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধির চূড়ায় ওঠে বিষ্ণুপুর।বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলির অবস্থান বেশ কাছাকাছিই। রিকশা ভাড়া করে প্রধান প্রধান মন্দিরগুলি ঘুরে নেওয়া যায়। সব চেয়ে বিখ্যাত জোড়বাংলা মন্দির। মল্লেশ্বর, মদনমোহন, জোড়বাংলা, মুরলিমোহন, শ্যামরায় মন্দিরগুলি ইটের তৈরি। কালাচাঁদ, লালজি, মদনগোপাল, রাধামাধব, রাধাগোবিন্দ, রাধাশ্যাম, নন্দলাল মন্দিরগুলি ল্যাটেরাইট পাথরে নির্মিত। মন্দিরগুলিতে পোড়ামাটির অপরূপ ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে দেব-দেবী, সমাজজীবন, ফুল-লতা-পাতা, পশুপাখির নানান মোটিফ। বিষ্ণুপুরের মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে আছে নাম না জানা ছোট ছোট মন্দির। যে স্থাপত্যরীতি বিষ্ণুপুরে সব চেয়ে সমাদৃত তাকে একবর্তনী শৈলী বলা হয়। বাঁকানো কার্নিসযুক্ত দেওয়াল ও ইষৎ ঢালু ছাদের কেন্দ্রে একটিমাত্র চূড়ার বিন্যাস।উইকএন্ডে যদি ইতিহাসকে সঙ্গী করতে চান তাহলে টুক করে চলে আসুন মন্দির শহর বিষ্ণুপুরে। কলকাতা থেকে ট্রেন ছাড়াও বাসেও চলে আসতে পারেন। থাকার জন্য রাজ্য পর্যটন দপ্তরের আবাস, স্থানীয় পৌরসভার অতিথি গৃহ ছাড়াও বেসরকারি হোটেলও রয়েছে। তবে ডিসেম্বরে মেলা দেখতে এলে আগে থেকে হোটেল বুক করে আসাই শ্রেয়।