ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের ২৪ পর্বে রইল ভালকি মাচান-এর গল্প।
ভালকি মাচান(Bhalkimachan forest)
ভল্লু রাজা(King Bhallu) মাচা তৈরি করে এই জঙ্গলের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় নিয়ম করে শিকারে আসতেন। সেই নামেই আজ ভালকির জঙ্গল। পোড়া ইটের তৈরি সেই দুর্গ এখনও আছে। আছে জলাশয়। লাল মাটির রাস্তায় পিচ পড়েছে। জঙ্গলের পেট চিরে এঁকে বেঁকে চলে গেছে ছোট্ট ছোট্ট গ্রামে। নামেই গ্রাম। মানুষ হাতে গোনা। কয়েকটি ঘর নিয়ে গ্রাম। ভীষণ শান্ত। বাতাসে জঙ্গল দুলে উঠলে আদিবাসীদের ধানখেতও দুলে ওঠে। এখানে পাতার শব্দে হই হই করে ওঠে ছোটরা। পর্যটক ছাড়া কিন্তু এখানকার সৌন্দর্য দেখার কেউ নেই। সারা দিনে দু-একটা ইঞ্জিন ভ্যানের শব্দ ছাড়া কোলাহলহীন, মনুষ্যবিহীন অন্য জগৎ।
বর্ধমানের ভালকি মাচান চেনেন এমন লোকজনের সংখ্যা বড়ই কম। তবুও কলকাতার অদূরে প্রকৃতির কোলে এ এক আদর্শ হারিয়ে যাওয়ার জায়গা। নীল আকাশের নীচে শাল, পিয়ালের রাজ্য। শীতে সোনাঝুরি ফুল। এক পৃথিবী সবুজের মধ্যে বিস্তৃত হলুদের গোলা। এখানেই চোখ থমকে দাঁড়ায়। দুপুরের কার্তিক আছড়ে পড়ায় আরও উজ্জ্বল সবুজ হয়েছে বন। কলকাতার কাছাকাছি হাতের কাছেই গাছেদের সঙ্গে ভয়হীন দৌড়ে বেড়ানোর এই ঠিকানাটি কিন্তু বেশির ভাগ বাঙালির অজানা। এমনকী খোদ বর্ধমান জেলার অনেকেই জানেন না নিজেকে উজাড় করে এখানে দু’দিন হারানো যায়। এবং তা বেশ নিশ্চিন্তেই। এলে অবাক হতেই হবে।
এখানে আসতে গেলে হাওড়া থেকে বোলপুরগামী ট্রেনে গুসকরা স্টেশনে নেমে গাড়িতে চলে আসুন ভালকি। গুসকরা থেকে ভালকি মাত্র ২২ কিমি রাস্তা। সড়কপথে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানের পারাজ থেকে ডান দিকে অভিরামপুর হয়ে সোজা ভালকি মাচান। পারাজ থেকে মাত্র ১৬ কিমি। ভালকির জঙ্গলে থাকার জন্য মাত্র একটিই হোটেল। নাম ‘অরণ্যসুন্দরী’। পাকা রাস্তার কাছাকাছি। এ অরণ্যে আর কোনও বাড়িও নেই। হোটেলে বিদ্যুৎ এসেছে। কিন্তু গোটা জঙ্গল সন্ধ্যা নামলে ডুবে যায় অন্ধকারে। জঙ্গলের মধ্যে ১০-১৫টি বাড়ি নিয়ে দূরে দূরে একেকটি গ্রাম। হোটেল থেকে দেখাও যায় না। সূর্য ডুবে গেলে যে যার মতো। নিজেদের সংস্কৃতিতে মশগুল। ধামসার আওয়াজ ভেসে আসে বহুদূর থেকে। আগে থেকে বলে রাখলে নাচের দলও পাওয়া যায়।