Chandrababu Naidu (Photo Credit: Instagram)

Shrimp Exports: কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। কোথায় মার্কিন মুলুকে বসে ট্রাম্প শুল্ক যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, আর কোথায় অন্ধ্রে চিংড়ি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তিহীন চড়া শুল্কে সরাসরি প্রভাব পড়েছে অন্দ্র প্রদেশের চিংড়ি ব্যবসায়। অন্ধ্র সরকারের দাবি, ট্রাম্পের আমলে চিংড়ি রফতানি শুল্কের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৭২%। তাই রাজ্যের চিংড়ি ব্যবসায়ীদের প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বারস্থ হলেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী এন.চন্দ্রবাবু নাইডু। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে দূরে থাকলেও চন্দ্রবাবু নাইডুর সমর্থনে তৃতীয়বার দেশের সিংহাসনে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাই চন্দ্রবাবুবর সব দাবিই গত কয়েক মাসে মেনে নিয়েছে মোদী সরকার। এবার চন্দ্রবাবুর দাবি, ট্রাম্পের শুল্কের ফলে চিংড়ি ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের।

চিংড়ি রফতানি ক্ষেত্রে শুধু অন্দ্র প্রদেশেরই ২৫ হাজার কোটি টটাকা ক্ষতির দাবি

আন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু জানিয়েছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত চড়া শুল্কের ফলে রাজ্যের চিংড়ি রপ্তানি খাতে ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। তার হিসাব অনুযায়ী, এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা। নাইডু দুটি আলাদা চিঠিতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এবং মৎস্যমন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিংহকে অনুরোধ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য দ্রুত ত্রাণমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার।

দেখুন খবরটি

 কী কারণে এই ক্ষতি

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রায় ৬০ শতাংশ শুল্কের মধ্যে রয়েছে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক, আগের ২৫% শুল্কের ওপর। তার সঙ্গে ৫.৭৬% প্রতিশোধমূলক (countervailing) ও ৩.৯৬% অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি যোগ হওয়ায় এপ্রিল ২০২৫ থেকে চিংড়ি রফতানিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। মার্কিন ক্রেতারা অন্ধ্র প্রদেশ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ রফতানি অর্ডার বাতিল করেছেন। এতে রপ্তানিকারক ও চাষিদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এদিকে প্রায় ২ হাজার কনটেইনার রফতানির ওপর প্রায় ৬০০ কোটি টাকা শুল্ক চাপানো হয়েছে, যা খাতের সঙ্কট আরও বাড়িয়েছে।

ভারতের চিংড়ি রফতানির ৮০ শতাংশই হয় অন্ধ্রপ্রদেশের

প্রসঙ্গত, ভারতের চিংড়ি রফতানির ৮০ শতাংশ এবং সামুদ্রিক রপ্তানির ৩৪ শতাংশই আসে অন্ধ্র থেকে। বছরে প্রায় ২১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা মূল্যের এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে আড়াই লক্ষ চিংড়ি চাষী পরিবার এবং প্রায় ৩০ লাখ পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট মানুষকে জীবিকা দেয়। তাই এই সঙ্কট এখন মানবিক সমস্যা হিসেবেও দেখা দিয়েছে।

অন্ধ্রের চিংড়ি চাষীদের কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু:

১) রফতানিকারকদের ঋণের সুদের ওপর ২৪০ দিনের স্থগিতাদেশ।

২) হিমায়িত চিংড়ির ওপর ৫ শতাংশ জিএসটি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার।

৩) সুদে ভর্তুকি: পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি টাকার কর্পাস ফান্ড (কোল্ড স্টোরেজ ও হাইজেনিক মার্কেট তৈরির জন্য)।

পাশাপাশি চিংড়ির বাজার আমেরিকার বাইরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কেন্দ্রকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও রাশিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার অনুরোধ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নাইডুর দাবি, রফতানিকারকরা এসব অঞ্চলে সরবরাহ করতে প্রস্তুত এবং এতে মার্কিন নির্ভরতা কমবে। পাশাপাশি দেশীয় বাজার বাড়াতে সচেতনতা প্রচার, সামুদ্রিক খাদ্য বা সি-ফুড পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেন, রাজ্যে আইসিএআর-সিবা'র মতো গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং 'আন্ধ্র প্রদেশ শ্রিম্প প্রোডিউসার্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি' গঠন করার প্রস্তাবও রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী নাইডু। প্রসঙ্গত, এনডিএ-র শরিক দল টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু-র অন্ধ্রের সরকারে আছে বিজেপিও। আবার কেন্দ্রে মোদী মন্ত্রিসভায় আছেন নাইডুর দলের সাংসদরাও।