শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়(File Photo)

কলকাতা, ১৪ আগস্ট:  বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই তৃণমূলের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক চুকিয়েই দিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee)। মঙ্গলবার বার বেলার এই ঘটনা গোটা তৃণমূল শিবির হজম করে ওঠার আগেই নতুন ধাক্কা। বিজেপিতে যোগ দিতে রাতেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Baishakhi Banerjee) সঙ্গে নিয়ে দিল্লি রওনা হয়ে গিয়েছেন শোভন। আজই নাকি দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরে দলীয় পতাকা হাতে তুলে নেবেন এই জুটি। শোভন-বৈশাখী যে বিজেপিতে যোগ দেবেন তা একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল লোকসভা ভোটের আগেই। সেই সময় বার বার বিজেপির তরফে শোভনবাবুকে অনুরোধ উপরোধ করা হলেও তিনি সাড়াশব্দ দেননি। আরও পড়ুন-বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে ইস্তফা দিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়, তবে কী বিজেপিতে? শুরু জল্পনা

তবে তিনি না দিলেও ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে গিয়েই বিজেপির তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক রামলালের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় রামলাল নিজের গরজেই পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক বিএল সন্তোষের সঙ্গেও বৈশাখীদেবীর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ঠিক সেই সময়ই এই জুটির আগামী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়ে যায়। তবে বিষয়টি এতদিন ধামাচাপা পড়েছিল, এবার তা পর্দা সরিয়ে প্রকাশ্যে আসছে। শোনা যাচ্ছে বিজেপিতে যোগ দিয়েই কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাংগঠনিক দায়িত্ব নেবেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আর এমনটা ঘটলে তৃণমূলের শিয়রে সমন সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এমনিতেই লোকসভা ভোটে খাস কলকাতার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে রাজ্যের শাসকদলের হাল খুব খারাপ। এবার যদি শোভনবাবুর মতো হেভিওয়েট নেতা বিজেপির সাংগঠনিক দায়িত্ব নেন তাহলে তৃণমূলের বিপদ যে বাড়বে সেবিষয়ে কারোরই কোনওরকম সন্দেহ নেই।

উল্লেখ্য, বিপদ আঁচ পেয়েই শোভনের মান ভাঙাতে গত ২৩ জুলাই তাঁর বাড়িতে যান দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মধ্যরাত পর্যন্ত দীর্ঘ বৈঠকও হয়, তবে নিট ফল শূন্যই দাঁড়ায়। এরপরই বৈশাখীদেবীকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে শোভনবাবু জানান, কলেজে অধ্যাপিকা বৈশাখীকে হেনস্তা করা হচ্ছে। আর এই ঘটনার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর হাত রয়েছে। তখন সবাই মনেকরেছিল এতবড় অভিযোগের পর এই জুটিকে বোধহয় আর তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে না। কিন্তু তাতেও দমেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈশাখীদেবীর ইস্তফা গ্রহণ না করে বরং নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) । গত শনিবার বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ফোন করে শোভনকে আসতে অনুরোধ করেন। তাতে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বলেছিলেন, সময় করে দেখা করবেন। তবে সেই সময় আর হল না গতকাল বিকেলেই দূতের হাত দিয়ে স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দিলেন। এই ইস্তফাপত্রই যে তৃণমূলের সঙ্গে শোভনের শেষ যাত্রার নিশানা হয়ে গেল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।