
দিল্লি, ২১ মে: ইউটিউবার থেকে পাকিস্তানি চর (Pakistani Spy)। জ্যোতি মালহোত্রার (Jyoti Malhotra) কীর্তিতে উত্তাল দেশ। তবে এই প্রথমবার নয়। এর আগেও পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি করে ধরা পড়েছেন মাধুরী গুপ্তা (Madhuri Gupta) নামে আরও এক মহিলা। তবে তিনি পেশায় ইউটিউবার নন, খোদ ভারত সরকারের কর্মী ছিলেন। শুনতে অবাক লাগলেও, ভারতীয় কূটনীতিক (Indian Diplomat) মাধুরী গুপ্তাকে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের (ISI) হাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দেওয়ার অভিযোগে।
২০১০ সালে মাধুরী গুপ্তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতের কূটনীতিক হয়েও দেশের মানসম্মান ডোবান মাধুরী গুপ্তা। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের হাতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে দেওয়ায় পাকড়াও করা রহয় মাধুরী গুপ্তাকে। ভারতের ইতিহাসে তাই মাধুরী গুপ্তার কীর্তি কার্যত জ্বলজ্বল করছে। দেশের সঙ্গে কীভাবে গদ্দারি করতে হয়, মাধুরী গুপ্তা তা প্রমাণ করেন। ফলে পাক চর জ্যোতি মালোহোত্রার আগে মাধুরীর কীর্তি নিয়ে তোলপাড় হয়ে যায় গোটা দেশ।
কী করেছিলেন মাধুরী গুপ্তা
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন মাধুরী। ২৭ বছর ধরে তিনি ভারতের কূটনৈতিক মহলে জমিয়ে কাজ করছিলেন। উর্দু ভাষায় অত্যন্ত সাবলীল ছিলেন মাধুরী গুপ্তা। ফলে তাঁকে পাকিস্তানে পাঠানো হয় ভারতের কূটনীতিক হিসেবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলি ভারত সম্পর্কে কী বলছে, তা জেনে দিল্লিকে রিপোর্ট করাই ছিল মাধুরীর প্রধান কাজ। এসব কাজের মাজেই হঠাৎ কখন যে মাধুরী গুপ্তা পাকিস্তানি চর হয়ে ওঠেন, তা কেউ ধরতে পারেনি প্রথমে। পরে হয় মাধুরীর পর্দা ফাঁস।
কবে মাধুরীর কীর্তি প্রকাশ্যে আসে
সন্দেহ অনেকদিন ধরেই দানা বাঁধতে শুরু করে। ২০১০ সালে প্রথম মাধুরী গুপ্তার পর্দা ফাঁস হয়। ওই সময় ভারতের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান রাজীব মাথুরকে ইসলামাবাদ মিশনের মধ্যে একটি তথ্য ফাঁসের খবর সম্পর্কে অবগত করা হয়। তদন্তকারীরা ওই সময় গোপণ অভিযান শুরু করেন। মাধুরী গুপ্তা কোনও খবর শত্রুপক্ষের হাতে তুলে দেন কি না, সে বিষয়ে নজর রাখেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তার জেরে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যান মাধুরী গুপ্তা।
মাধুরী গুপ্তার প্রেম এবং তথ্য ফাঁস
জানা যায়, ইসলামাবাদে থাকাকালীন মাধুরী গুপ্তা জামশেদ নামে এক পাকিস্তানির প্রেমে পড়েন। এই জামশেদই ছিল পাক ইনটেলিজেন্স অপারেটিভের কর্মী। জামশেদকে কাজে লাগিয়ে মাধুরী গুপ্তাকে হানিট্র্যাপ করে পাকিস্তান। ভারতের সম্পর্কে একাধিক তথ্য হাতাতেই জামশেদের মাধ্যমে মাধুরী গুপ্তাকে ওই সময় হানিট্র্যাপ করা হয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পারেন।
কোন তথ্য পাচার করতেন মাধুরী গুপ্তা
জানা যায়, ভারতের বিদেশ নীতির একাধিক তথ্য মাধুরী গুপ্তা আইএসআইয়ের হাতে তুলে দেন। পাশাপাশি মুম্বই হামলার তদন্তের বহু তথ্যও জামশেদের হাত হয়ে আইএসআইয়ের কাছে পৌঁছে যায় এই মাধুরীর কীর্তিতে। আইএসআই হ্যান্ডেলারদের তৈরি করা বিভিন্ন ইমেল ব্যবহার করতেন মাধুরী গুপ্তা। পরে তদন্ত শুরু হলে, সেই সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসে।
মুবশার রাজা রানা এবং জামশেদ, এই দুই আইএসআই হ্যান্ডেলারের সঙ্গে মাধুরী গুপ্তার ক্রমাগত যোগাযোগ থাকত। তাদের মাধ্য়মেই তিনি ভারতের একাধিক তথ্য আইএসআইয়ের হাতে তুলে দিতে শুরু করেন বলে জানা যায়।
মাধুরী গুপ্তার গ্রেফতারি
মাধুরী গুপ্তার সম্পর্কে একাধিক তথ্য হাতে আসার পর তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়। ২০১০ সালের ২২ এপ্রিল তাঁকে গ্রেফতার করা হয় দিল্লিতে আসার পর। দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের আধিকারিকরা তথ্য পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে মাধুরী গুপ্তাকে।
গ্রেফতারির পর ২১ মাস দিল্লির তিহাড় জেলে থাকেন মাধুরী গুপ্তা। এরপর ২০১৮ সালে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরপর ২০২১ সালে ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই মাধুরী গুপ্তার।