Rajya Sabha (Photo Credit: X)

নয়াদিল্লি: সংবিধান (Constitution) থেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ (Socialist) এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ( Secular ) শব্দ দুটি  বাদ দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বর্তমানে নেই তা স্পষ্ট করে জানাল সরকার। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল রাজ্যসভায় বলেন, কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই শব্দগুলো বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন, তবে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

ভারত একটি বহু-ধর্মীয়, বহু-সাংস্কৃতিক দেশ। সংবিধান প্রণয়নের সময় থেকেই নিশ্চিত করা হয় যে রাষ্ট্র কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের পক্ষপাত করবে না এবং সকল ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করবে। যদিও প্রথমে মূল সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি ছিল না, সংবিধানের বিভিন্ন ধারা (যেমন ধারা ২৫-২৮) ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতার নীতিকে সমর্থন করেছিল।

১৯৭০-এর দশকে ধর্মীয় উত্তেজনা এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদের কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার এই নীতিকে আরও স্পষ্ট করার জন্য ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি প্রস্তাবনায় যুক্ত করে। এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে জোরদার করার একটি পদক্ষেপ ছিল, যাতে সকল ধর্মের নাগরিকদের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা যায়। এই সংশোধনীটি ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপক এবং বিতর্কিত সংশোধনী হিসেবে বিবেচিত হয়।

দেশে জরুরি অবস্থার সময়ে সরকারের উপর জনগণের আস্থা হ্রাস পাচ্ছিল। এই সময়ে সরকার তাদের সমাজতান্ত্রিক দর্শনকে সংবিধানের মাধ্যমে জোরালোভাবে প্রচার করার পরিকল্পনা করে। ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি যুক্ত করার উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা, সম্পদের ন্যায্য বণ্টন এবং গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার প্রকাশ। আরও পড়ুন: Palestine: গণ দুর্ভিক্ষ গিলছে, নোংরা থেকে খাবার তুলে খাচ্ছেন গাজ়ার মানুষ, প্যালেস্তাইন নিয়ে বড় সিদ্ধান্তের কথা ফ্রান্স ঘোষণা করতেই পিছনে পড়ে গেল আমেরিকা

তবে অনেকে মনে করেন যে ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দটি বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এটি একটি পুরানো আদর্শ, যা ভারতের বর্তমান বাজারভিত্তিক অর্থনীতির সঙ্গে মেলে না। বর্তমানে কিছু গোষ্ঠীর দাবি, শব্দগুলো সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যা এই আলোচনাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলেছে।

২০২০ সালে বলরাম সিং, করুণেশ কুমার শুক্লা এবং প্রবেশ কুমার নামে তিন ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা দিয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে এই শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার দাবি জানান। তাঁদের যুক্তি ছিল যে এই শব্দগুলি সংবিধানের মূল ভাবনা এবং ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং ‘সমাজতন্ত্র’ কমিউনিস্ট চিন্তাধারার সঙ্গে জড়িত। এই আবেদনটি ২০২৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে আলোচনায় আসে, যদিও আদালত এই শব্দ বাদ দেওয়ার পক্ষে কোনও সঙ্গত কারণ খুঁজে পায়নি।

২০২৫ সালের জুলাই মাসে আরএসএস-এর সাধারণ সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসাবলে প্রকাশ্যে এই শব্দ দুটি সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি যুক্তি দেন যে এই শব্দগুলি ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে ইন্দিরা গান্ধীর সরকার ৪২তম সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত করেছিল, যা সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই মন্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এবং এই বিষয়টি রাজ্যসভায় উত্থাপিত হয়।

শব্দগুলো নিয়ে উত্থাপিত বিতর্কের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিরোধী দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী সরকারের অবস্থান জানতে চায়। ২৪ জুলাই রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল স্পষ্ট করেন যে সরকারের এই শব্দ দুটি বাদ দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা বা প্রক্রিয়া বর্তমানে নেই।