শ্রাবণ মাসের সোমবার মানেই মহাদেবের পুজোর দিন ৷ লক্ষ লক্ষ ভক্তের দল বাঁক কাঁখে নিয়ে মহাদেবের মাথায় জল ঢালার উদ্দেশ্যে পৌছে গিয়েছেন বাংলার উল্লেখযোগ্য শিবতীর্থ তারকেশ্বরে। কিন্তু কীভাবে সৃষ্টি হল তারকেশ্বরের স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ ? কে প্রতিষ্ঠা করেছিল এই মন্দির ? কীই বা তাঁর মহিমা ? চলুন জেনে নেওয়া যাক তারকেশ্বরের মন্দিরের প্রচলিত ইতিহাস---
কলকাতা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরত্বে হুগলি জেলায় রয়েছে মহাদেবের এই প্রাচীন মন্দিরটি। কথিত রয়েছে, এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিষ্ণুদাস নামক অবাঙালি এক শিবের উপাসক৷ শিবভক্ত বিষ্ণু এসেছিলেন অযোধ্যা থেকে কিন্তু হুগলিতে এসে একঘরে হয়ে যান তিনি ৷ স্থানীয়রা তাঁকে ভাল চোখে দেখতেন না, তাঁর উপর চলত অত্যাচার-নিপীড়নও, এই কষ্ট থেকে উদ্ধার করার জন্য মহাদেবকে ডাকতে থাকেন তিনি ৷ এই সময় বিষ্ণুদাসের এক ভাই দেখতে পান, জঙ্গলের মধ্যে একটি পাথরখণ্ড রয়েছে ৷ গরুরা প্রতিদিন এসে ওই খণ্ডের উপর দুধ দান করে যায় ৷ বাড়িতে এসে দাদাকে সব কথা বলেন তিনি । তখনই স্বপ্নাদেশ পান বিষ্ণুদাস ৷ স্বপ্নে মহাদেব নির্দেশ দেন, ওই পাথরটিই তাঁর রূপ ৷ এরপরই বিষ্ণুদাস জঙ্গলের মধ্যে মহাদেবের মন্দির তৈরি করেন ৷ শিবের তারকেশ্বর রূপে পূজিত হতে থাকেন মহাদেব।
তারকেশ্বরের মহাদেবকে বলা হয় স্বয়ম্ভূলিঙ্গ ৷ কারণ তারকেশ্বরের শিবলিঙ্গ কেউ স্থাপন করেননি। অন্যদিকে, গঙ্গার পলল ভূমিতে ওই ধরনের পাথর মেলাও মুশকিল। তাই মনে করা হয়, শিব এখানে স্বয়ং অবির্ভূত হয়েছিলেন ৷
আজকের তারকেশ্বরের মন্দির অবশ্য মল্ল রাজাদের হাতে তৈরি ৷ জানা যায়, স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মল্লরাজ ভারামল্ল ১৭২৯-এ এখানে মন্দির তৈরি করান ৷পরে আজকের আটচালা মন্দিরটি তৈরি করেন শিয়াখালার গোবর্ধন রক্ষিত। তারকেশ্বর মন্দির বাংলার চালা স্থাপত্যের আদর্শ উদাহরণ। যে ক’টি প্রাচীন চালা মন্দির বাংলায় টিকে রয়েছে, তার মধ্যে তারকেশ্বর অন্যতম।মন্দির সংলগ্ন দুধপুকুরে স্নান করে বাবা তারকনাথের পুজো দেন সাধারণ মানুষ ৷ ভক্তদের বিশ্বাস, দুধপুকুরের জলে অলৌকিক শক্তি আছে ৷ এখানে স্নান করে পুজো দিলে আরোগ্যপ্রাপ্তি হয় মহাশিবরাত্রি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে তারকেশ্বর মন্দিরে বিশেষ উৎসব হয়। প্রতি সোমবার হয় বিশেষ পূজা। তবে, শ্রাবণের সোমবারগুলিতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সমাগমে মেতে ওঠে মন্দির প্রাঙ্গন ৷