নতুন দিল্লি, ২৫ জুন: দেশে এই প্রথম হতে চলেছে লোকসভার অধ্যক্ষ বা স্পিকার নির্বাচন (Lok Sabha Speaker Election 2024)। শাসক শিবির এনডিএ-র প্রার্থী বিজেপি সাংসদ ওম বিড়লা (Om Birla)-র বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের প্রার্থী কংগ্রেস সাংসদ এস সুরেশ (S Suresh)। দু'জনেই লোকসভার অধ্যক্ষ পদের নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
ওম বিড়লা গত লোকসভায় স্পিকার ছিলেন। এবার তিনি খুব সামান্য ব্যবধানে রাজস্থানের কোটা লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদ হন। অন্যদিকে, কেরল কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা এস সুরেশ টানা আটবার সাংসদ হয়ে নজির গড়েছেন।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক স্পিকার নির্বাচন সবার মধ্যে তৈরি হওয়া কিছু প্রশ্নের উত্তর
কেন সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচন করা গেল না
স্বাধীনতার পর থেকে বারবার দেখা গিয়েছে শাসক ও বিরোধীরা একমত হয়ে স্পিকার নির্বাচন করেছেন। কারণ স্পিকার বা অধ্যক্ষ কোনও দলের হন না, নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করার কথা। কিন্তু গত লোকসভা অধিবেশনে বিরোধীদের রেকর্ড সংখ্যক সাংসদকে সাসপেন্ড করা থেকে শাসদ দলের সাংসদ হলে কোনও কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ ইন্ডিয়া জোটের নেতা ওম বিড়লা-র বিরুদ্ধে তুলেছিলেন। ইন্ডিয়া জোটের নেতাদের বক্তব্য, মোদী জমানায় রাজ্যপালের মতই আর স্পিকার পদও শুধুও বিজেপি নেতাদের মত আচরণ করেন। অতীতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে পিএ সাংমা-রা যেটা করেননি। তাই কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী দাবি তুলেছিলেন স্পিকার পদে এনডিএ জোটের কেউ থাকুক, আর ডেপুটি স্পিকার পদে বিরোধী জোটের সাংসদ। কিন্তু তাতে রাজি না হননি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা। কোনও মতেই বিরোধীদের ডেপুটি স্পিকার পদ ছাড়তে চায়নি বিজেপি। বরং ডেপুটি স্পিকার পদে টিডিপি-র কাউকে দিতে রাজি হয়েছে গেরুয়া শিবির। এরপরই বিরোধী জোট স্পিকার পদে প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্পিকার নির্বাচনে কেন গেল বিজেপি-কংগ্রেস
বিজেপি-র কাছে হিসেব পরিষ্কার। কংগ্রেসের দাবি মেনে ডেপুটি স্পিকার পদ ছেড়ে দিলে বার্তা যেত কেন্দ্র মোদী সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটা ঠিক বিজেপির ফল এবার খারাপ হয়েছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেলেনি। তবে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের দাবি, ক্ষমতায় যখন ফেরা গিয়েছে, তখন ফল খারাপ হয়েছে বলে কান্নার দরকার নেই। বরং মোদীকে দেশের মানুষ যে কারণে পছন্দ করেন সেই দৃঢ়তা তুলে ধরতে হবে। তাই কংগ্রেস বা ইন্ডিয়া জোটকে স্পিকার পদে ভোটাভুটিতে যেতে রাজি হল বিজেপি। আর কংগ্রেসের হিসেব হল, বিনা যুদ্ধে আর এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না মোদীকে। তাই নির্বাচনে হার-জিতের অঙ্ক না ভেবে লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে শুরু থেকেই লোকসভায় লড়বে ইন্ডিয়া জোট। এভাবে লড়তে লড়তেই জয় আসবে বলে আশায় কংগ্রেস নেতারা।
স্পিকার পদ নিয়ে এত কাড়াকাড়ি কেন
এমনিতে মনে হবে লোকসভার স্পিকার পদের তেমন গুরুত্ব নেই। কিন্তু যখন দুটো শিবিরের ব্যবধান খুব কম থাকে। শাসক শিবিরে দলবদলের রেকর্ড থাকা নেতাদের ভিড় থাকে তখন স্পিকার পদের গুরুত্ব খুব বেড়ে যায়। কারণ লোকসভায় আস্থা ভোটের সময় স্পিকার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, কোনও ইস্য়ুতে বিতর্ক, সাসপেনসন, সংসদে বক্তব্য রাখার মত বিষয়ও এখন স্পিকারের ভূমিকা অনেক। কারণ মাত্র ৩০-৩৫ জন সাংসদের এদিক ওদিক হলেই সরকার পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় প্রতিটি সংসদ অধিবেশন এবার গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
কত ভোট পেলে নির্বাচিত হবেন স্পিকার
অর্ধেকের বেশী সাংসদের সমর্থন পেলেই তিনি সাংসদ নির্বাচিত হবেন। মানে ২৭২ জন সাংসদের সমর্থন পেলে স্পিকার ভোটে জয় নিশ্চিত হবে।
কারা এগিয়ে
২৯৩ জন এনডিএ সাংসদের সমর্থনে ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে ইন্ডিয়া জোটের কাছে আছে ২৩৪ জন সাংসদের সরাসরি সমর্থন। চন্দ্রবাবুর টিডিপি, নীতীশ কুমারের জেডি (ইউ) সেভাবে মোদীর সমর্থক না হলেও নিজেদের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বিজেপি-কে সমর্থন করায় দেশের ক্ষমতায় বদল আসেনি। এই কয়েক দিনের মধ্যে এমন কোনও কিছু ঘটে যায়নি যাতে টিডিপি আর জেডিইউ-য়ের ভোট ইন্ডিয়া জোটের দিকে আসবে। এর মধ্যে দুইজন নির্দল সাংসদ কংগ্রেসের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়েছেন। তবু সব ঠিকঠাক চললে ওম বিড়লাই আরও একবার লোকসভার অধ্যক্ষ থাকছেন। এখন দেখার স্পিকার নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া জোট স্পিকার নির্বাচনকে ঘিরে নিজেদের কতটা গোছাতে পারে।
লোকসভার কয়েক জন জনপ্রিয় স্পিকারের নাম
সবার আগেই হয়তো সিপিএম সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় (২০০৪-২০০৯)-এর নাম আসবে। কারণ তিনি শুধু সুশিক্ষিত, মার্জিতই ছিলেন না, পাশাপাশি স্পিকার পদটা যে সত্যি নিরপেক্ষ তাও নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের ঝুঁকি নিয়ে প্রমাণ করেছিলেন। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি লোকসভার স্পিকার হিসেবে শাসক ও বিরোধী উভয় পক্ষের আস্থাঅর্জন করতে পেরেছিলেন- শিবরাজ পাতিল (১৯৮০-৮৫), পিএ সাংমা (১৯৯৬-৯৮), মনোহর যোশী (২০০২-২০০৪),
প্রথম ও দ্বিতীয় মোদী সরকারে লোকসভার স্পিকার কে কে ছিলেন
মোদী সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর লোকসভার স্পিকার হয়েছিলেন ইন্দোরের বিজেপি সাংসদ সুমিত্রা মহাজন। পাঁচ বছর পর তাঁর জায়গায় দায়িত্বে আসেন কোটার সাংসদ ওম বিড়লা। ২০১৯-২৪ থেকে ৫ বছর লোকসভার সাংসদ ছিলেন ওম বিড়লা।
দ্বিতীয় মনমোহন সিং সরকারের আমলে লোকসভার স্পিকার কে ছিলেন
বিহারের সাসারামের কংগ্রেস সাংসদ মীরা কুমার। তিনিই ছিলেন লোকসভায় দেশে প্রথম মহিলা স্পিকার।