কোটা স্টেশন (Photo: Twitter)

ও পাড়ার বান্টি, রাহুল (নাম পরিবর্তিত)। আমাদের পাড়ার গোপীচাঁদ (নাম পরিবর্তিত)। এরা প্রত্যেকেই থাকে রাজস্থানের (Rajasthan) কোটায় (Kota)। থাকে বলতে পাকাপাকি ভাবে নয়। থাকে কাজের সূত্রে। কাজ মানে পড়াশোনা। লকডাউনের কারণে তারা সবাই বাড়ি ফিরছে। কিন্তু ঠিক কী আছে রাজস্থানের ওই শহরে। যার জন্য এত কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়ে থাকা। রাজস্থানের ছোটো শহর কোটা, মার্বেল, শাড়ি, দুর্গ এবং প্রাসাদের জন্য বিখ্যাত হলেও বিশ্ব মানচিত্রে এই শহরের পরিচিতি লেখাপড়ার শহর হিসেবে। আসলে কোটা হচ্ছে কোচিং সেন্টারের হাব (Coaching Hub)। এখানে থেকেই সঠিক প্রশিক্ষণ নিয়ে হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারিং, আইআইটি পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আসলে এই শহের অলিতে গলিতে কোচিং সেন্টার। কোনও সেন্টারের বাইরে লেখা, "Your ticket to your dream IIT"।

তবে আপনি চাইলেন আর যে কোনও কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে গেলেন সেটা হবে না। এখানে অনেক কোচিং সেন্টার প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়। তারা দেখে নেয়, কোন ঘোড়ার কত দূরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবেই কোচিং দেবে, না হলে কচুরি খাইয়ে পথ দেখাবে। আরে বলতে তো ভুলেই গেছিলাম যে কোটায় খুব ভালো কচুরি পাওয়া যায়। লোকে বলে, এখানকার বাসিন্দারা নুন টু মুন (Noon to Moon) কচুরি খায়। একটা কথা ওখানে চালু আছে, "কোটা কা পানি কচুরি মাঙ্গতা হে (The water of Kota demands eating Kachori)। আসলে ওখানকার বাসিন্দাদের কথায় বললে, "আমরা চম্বল নদীর জল হজম করতে কচুরি খাই।" এখানকার কয়েতবেলের চাটনির সঙ্গে হিং-র কচুরি খেলে আপনি ভুলতে পারবেন না। মানে আপনাকে ভুলে যেতে দেবে না। রামপুরা, নয়াপুরা ও ছাওনি চৌরাহ এলাকার দোকানের মালিকরা কচুরি বেচেই কোটিপতি। কী ভাবছেন সব ছেড়ে যাবেন নাকি কোটায় কচুরি বেচতে। আরও পড়ুন: Kolkata: রাজস্থানের কোটা থেকে রাজ্যে ফিরলেন ১৭০০ পড়ুয়ারা

কচুরি খেয়ে এবার ফিরে যাওয়া যাক পড়াশোনায়। যা বলছিলাম, আইআইটি কোচিং হাব হিসাবে কোটার উত্থান ১৯৮৫ সালে শুরু হয়েছিল। ১৯৭১ সালে কোটায় চাকরিসূত্রে যান ভি কে বনসল (Vinod Kumar Bansal) নামের এক ব্যক্তি। তিনিই পরবর্তীতে বনসল কোচিং স্থাপন করেছিলেন যা পরবর্তীতে বনসল কোচিং ক্লাস প্রাইভেট লিমিটেডে পরিণত হয়। তো মিস্টার বনসল ১৯৮১ সালে ক্লাস সেভেন, এইটের পড়ুয়দের প্রাইভেট টিউশন দেওয়া শুরু করেন এবং পরে ক্লাস টেন ও ক্লাস ইলেভেনেরও শুরু করেন।

১৯৮৫ সালে তাঁর জীবন পালটে যায়। পালটে যায় কোটারও ভাগ্য। আসলে ১৯৮৫ সালে মিস্টার বনসলের এক ছাত্র আইআইটি-জেইই পরীক্ষায় পাস করে। পরবর্তীকালে বনসল বড় করে কোচিং সেন্টার চালু করেন। ১৯৯১ সালে যখন তিনি বড় কিছু করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাবসর নেন। জানা যায়, সেই বনশল ক্লাসের সারা দেশে অনেক শাখা রয়েছে। তো সেই বনশল ক্লাসে পড়াতে আসা লোকজনই পরবর্তীকালে নিজেরাই কোচিং সেন্টার খুলে বসে। তারই কোটি কোটি টাকার ব্যবসা শুরু করে। এখানে বছরে কোচিং নেওয়ার খরচ অনেক রকম। অনেক সময় বছরে খরচ ৮০ হাজার টাকাও হয়। থাকা ও খাওয়ার খরচা যে কোচিং নিতে যাবে তার। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার ছেলে মেয়ে কোচিং নিতে যায় ওখানে।

সকাল হলেই কোটায় দেখা যাবে কোচিং সেন্টারের পথে রওনা দিয়েছে পড়ুয়ারা। খানিকটা আমাদের এখানে যেমন সকালে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করে দেয়, বাসে তুলে দেয়। কারণ ছেলে মেয়েদের জন্য অনেক সময় বাবা-মায়েরাও ওখানে থাকেন। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ক্লাস শুরু, শেষ হবে সেই ২টো। ২০১৭ সালের একটি হিসেব বলছে কোটায় সারা বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। যা শুনে অনেকেই চোখ কপালে ওঠে। কারণ এই কোচিং ব্যবসায় বিনিয়াগ করে দেশ-বিদেশের লোকজন। বছরে একজন শিক্ষকের বেতন হতে পারে ১৫-৫০ লাখ টাকা। এই শহর থেকে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার পড়ুয়া মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর তাতে প্রতি ৪ জনের মধ্যে একজন সুযোগ পায় উচ্চশিক্ষায়।

তবে সব কিছুর ভালো দিকের সঙ্গে খারাপ দিকও থাকে। কোটার ক্ষেত্রেও আছে। আসলে এখানেও দিনেদিনে বাড়ছে আত্মহত্যর ঘটনা। মানসিক চাপ, পড়ার চাপ নিতে পারায় বহু ছেলে-মেয়ে এখানে আত্মহত্যা করে। তাই কোটাকে 'Education City of India'-র সঙ্গে সঙ্গে 'Capital for student suicides'-ও বলা হয়।