নতুন দিল্লি, ৩১ জানুয়ারি: ১৯৪৮-এর ৩০ জানুয়ারি যেন বিজেপি সরকারের আমলে ফের প্রতিফলিত হল রাজধানীর বুকে। ২০২০-র ৩০ জানুয়ারি রামভক্ত গোপাল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার (Jamia shooting) শান্তিপূর্ণ ছাত্রদলের দিকে বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে গেল। গুলি চালানোর আগে বলল, ‘ইয়ে লো আজাদি’। আর পুলিশ দর্শকের ভূমিকা নিল। রামভক্ত গোপাল শর্মার ছোঁড়া গুলিতে ততক্ষণে জখম হয়েছেন জামিয়ার ছাত্র স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া শাদাব ফারুখ। পুলিশ গোপালকে ধরতে তৎপর হয়নি। গুলি চালানোর পর সে ধীরে ধীরে পুলিশের ব্যারিকেডের কাছে এলে তারপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তার আগে পুলিশের ভূমিকা ছিল খানিকটা লজ্জাবনত বধূর মতো। দুষ্কৃতী নিরস্ত্র ছাত্রদলের উপরে গুলি চালাচ্ছে, আর পুলিশ ঘোমটার আড়ালে ঢাকছে মুখ। এটাই বর্তমান ভারত।
শাদাবে হাতে গুলি লেগেছিল, তাঁকে উদ্ধার করতে পুলিশ মোটেও ছুটে আসেনি। ওই ছাত্র নিজেই হেঁটে হেঁটে পৌঁছে যান ব্যারিকেডের কাছে। তারপর তাঁকে এইমসে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে পুলিশের মধ্যে কোনও তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। আপাতত বিপন্মুক্ত শাদাব ফারুখ। দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ এই ঘটনার পরে রাত পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে রইল জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা। বার বার ভাঙার চেষ্টা হল পুলিশের ব্যারিকেড। তার উপরে চড়ে টানা স্লোগান দিলেন বহু তরুণী। জলকামান, লাঠি-সহ সিআরপিএফ, সশস্ত্র বাহিনী মজুত থাকলেও এ দিন আর বলপ্রয়োগের পথে হাঁটেনি দিল্লি পুলিশ। বরং কথা বলে পড়ুয়াদের শান্ত করার চেষ্টা করে তারা। তার মধ্যেই চার জনকে আটক করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে তাদের ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আরও পড়ুন-Farrukhabad Hostage Crisis: টান টান উত্তেজনার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ফাররুখাবাদে এনকাউন্টারে হত অভিযুক্ত, নিরাপদে উদ্ধার ২৩ জন শিশু
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা বেফাঁস মন্তব্য করে আসলে যে রামভক্ত ও সংঘ সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করছেন, তানিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অনুরাগ ঠাকুরের গোলি মারো বক্তব্যই তো কাল প্রতিফলিত হল জামিয়ার সাত নম্বর গেটের বাইরে। ঠিক একই স্লোগান শোনা গিয়েছিল জেএনইউ-তে হামলাকারী মুখোশাধারী এবিভিপির সমর্থকদের মুখে। এ দিন সব থেকে বেশি ক্ষোভের মুখে পড়েছে পুলিশই। বিকেলে ব্যারিকেডে বাঁধা দড়ি প্রতিবাদীরা পুড়িয়ে দেন। অনেকে বলছেন, ‘‘দিনের আলোয় মাঝ রাস্তায় খাস রাজধানীর বুকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দিচ্ছে এক দুষ্কৃতী। আর পিছনে দাঁড়িয়ে হাঁ করে তা দেখছে পুলিশ! নড়ার চেষ্টাটুকুও নেই!’’ দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়েছে সেই ছবি। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এমন পরিস্থিতি দেখেও বুকের কাছে জড়ো করা হাত দু’টিও নামাননি এক পুলিশ অফিসার? বাকিরাই বা কেন ছবির মতো স্থির?