কলকাতা, ২৩ মে: বাংলায় একেবারে নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)-ঝড়। ২০১৪-এ যেটা পারেননি সেটাই পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পর করে দেখালেন মোদী। একটা সময় যে রাজ্যে বিজেপি (BJP)-বলে কিছু ছিল না, সেখান থেকেই ১৯জন সাংসদ পাওয়ার একেবারে দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে বিজেপি। আর বিজেপির বঙ্গে সাফল্যের পিছনে থাকল পাঁচটা বড় কারণ- ১) নরেন্দ্র মোদীর প্রচারে ঝড় তোলা, ২) মুকুল রায়ের দল ভাঙানোর সঠিক খেলা, ৩) অমিত শাহ-র মগজাস্ত্র, ৪) মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে চলা ক্ষোভ, ৫) রাজ্য বাম ভোটে ধসের সবটা নিজেদের দিকে আনা।
ভোটের আগে বলা হচ্ছিল, বাঙলায় ভোটটা ৪২-০-র হতে চলেছে। মানে মমতা ব্যানার্জি এ রাজ্যের সব লোকসভা আসনে জিতে বিরোধী শূন্য করে দেবেন। এমন একটা লক্ষ্যেই ভোটে নেমেছিল তৃণমূল। কিন্তু সময় যেতে গেছে ততই চাপে পড়েছেন মমতা। প্রথমে দলে বড় ভাঙন। সৌমিত্র খাঁ, অনুপম হাজরাদের মত সাংসদদের দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগদানের পর, ভাটপাড়ায় অর্জুন সিংয়েরও পদ্মে যোগ, বড় ফ্যাক্টার হয়ে দেখা দিল। যে জঙ্গলমহলে মমতার দাপট ছিল দেখার মত, সেখানেও তিনি পরাস্ত হলেন। মানস ভুঁইয়া-র মত নেতাকে দাঁড় করিয়েও মেদিনীপুরে হারলেন দিদি। ঝাড়গ্রামেও জোড়া ফুল পরাস্ত। বাঁকুড়া, পুরুলিয়াতেও মমতাকে হারিয়ে দিলেন মোদী। উত্তরবঙ্গে তো তৃণমূল কার্যত নিশ্চিহ্ন।
আসানসোলে বাবুলকে শত চেষ্টা করেও হারাতে পারলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো। হুগলির মত আসনেও জয়ের লকেট বিজেপি-র গলাতেই উঠল। মন্দের ভাল ফল কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুরে। বনগাঁর মত আসনে তৃণমূলের হারের ব্যাখা পাওয়া কঠিন। দিনের শেষে দেখা যাচ্ছে বিজেপি রাজ্যে জিতে বা এগিয়ে ১৯ আসনে, তৃণমূল সেখানে ২০-২১টি আসনে এগিয়ে। তাহলে হিসেব কী দাঁড়াল! ৪২-০ লড়াই এখন '১৯-বিশে' দাঁড়িয়ে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন জমে গেল। মুকুল রায় হাসছেন। দিলীপ ঘোষ গেরুয়া আবির মেখে ঘুরছেন। রাজ্যে পদ্মে ঝড়ে এখন সব কিছু সম্ভব।
রাজ্যে তিনটি বিধানসভা আসনের দল একেবারে ১৬টারও বেশি লোকসভা কেন্দ্র জয়ের দোরগড়ায়। পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কোচবিহার থেকে আলিপুরদুয়ার। জলপাইগুড়ি থেকে বালুরঘাট। সঙ্গে দার্জিলিং ধরে রেখে উত্তরবঙ্গ জুড়ে ঝড় তুলল বিজেপি। সঙ্গে গনি খানের মালদাতেও আসন জিতে চমকে দিল বিজেপি। জঙ্গলমহলেও বিজেপি-র দাপট।
রাজ্যে বিজেপি যে সব আসনে জিতল বা এগিয়ে বিজেপি--
জয়ী-হুগলী, দার্জিলিং, আসানসোল, মালদহ দক্ষিণ, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর, ব্যারাকাপুর।
এগিয়ে-কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, রায়গঞ্জ, বালুরঘাট, রানাঘাট, বনগাঁ, বর্ধমান-দুর্গাপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া।