সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

আজ প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) ৮৬-তম জন্মদিন। মাস কয়েক আগে টলিউডের শ্যুটিং ফ্লোর, থিয়েটারের মঞ্চ এবং লক্ষ লক্ষ অনুরাগীর মন খালি করে তিনি পরলোকে পাড়ি দেন। যে সত্যজিৎ রায়, শিশির ভাদুড়ী, উৎপল দত্তদের সঙ্গে নিয়ে কর্মজীবনে সাফল্য আসে শিল্পীর, সেই বিশিষ্টদের স্বর্গরাজ্যে চলে যান তিনি। আজ তাঁর জন্মদিনে সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়ে শুভেচ্ছার ঝড়। তিনিই নেই তবুও রয়ে গেছেন সকলের মনে।

'অপুর সংসার' ছবির জন্য সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray) নির্বাচন করেছিলেন তাঁকে। তখন তাঁর ছায়াছবিতে অভিনয় সম্পর্কে প্রায় কিছুই ধ্যানধারণা ছিল না। এরপর তাঁকে ছবির জন্য বেছে নেওয়া। যার ইতিহাস কারোরই অজানা নয়। এরপর আলাপ যখন গভীরতা পায়, মাঝে মাঝেই সত্যজিৎ রায়ের বাড়িতে যেতেন সৌমিত্র। আড্ডা, গল্প থেকে সম্পর্কের দূরত্ব ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। সত্যজিৎ বাবুর স্ক্রিপ্ট লেখা হয়ে গেলে উনি সেই চিত্রনাট্যের কপি তাঁকে পড়তে দেন। সেই প্রথম, এর আগে উনি কাউকে তাঁর চিত্রনাট্য পড়তে দিতেন না। কিন্তু সৌমিত্রবাবুকে দিয়েছিলেন। যা যত্ন সহকারে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। ইংরেজিতে লিখতেন তিনি। যাবতীয় প্রয়োজনীয়, নির্দেশ, টীকা সবই ইংরেজিতে, শুধু সংলাপের অংশ বাংলায়। সেই নিয়ে চিত্রনাট্য দিনের পর দিন হয়েছিল আলোচনা। সৌমিত্রবাবু নিজেই বলেছিলেন, অভিনেতাদের সঙ্গে নাকি খুব বেশি আলোচনা করতে পছন্দ করতেন না, আবার কেউ জিজ্ঞেস করলেও আপত্তি করতেন না। 'অপুর সংসার'-র সময় সৌমিত্রবাবুকে 'অপু পরিচিতি' আলাদা করে লিখে দিয়েছিলেন। ইংরেজিতে নয়, বাংলায়। সৌমিত্রবাবু সবসময় বলে এসেছেন, 'এ ধরণের সাহায্য অন্য কাউকে করেছেন কিনা জানিনা না, তবে আমার ক্ষেত্রে সেটাই প্রথম প্রাপ্তি।' আরও পড়ুন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অভিনেত্রী লিলি চক্রবর্তী

এভাবেই তাঁর জীবনের একাংশ গড়ে তুলেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এরপর সত্যজিত রায়ের তালিমে একটু একটু করে গড়ে ওঠা সেদিনের তরুণ টলিউডে বটবৃক্ষের মতো হয়ে দাঁড়ায়। এরপর তাঁর অভিনয়ের সুদক্ষতা, স্বাবলীলতা তাঁকে চরিত্র 'ক্ষিদদা' থেকে বাস্তব বানায়, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অসুস্থতার সঙ্গে 'ফাইট ফাইট' শব্দটি উচ্চারণ করে গেছেন।

বাঙালির আবেগ, চিরকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতাকে তাঁর ৮৬-তম জন্মদিনে সশ্রদ্ধ প্রণাম।