মুম্বই, ৭ জুলাই: আটানব্বইতে এসে নিভে গেল তাঁর জীবন প্রদীপ। চলে গেলেন বলিউডের 'ট্রাজেডি কিং' দিলীপ কুমার। দিলীপ সাব-এর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা বলিউড (Bollywood)। অমিতাভ বচ্চন থেকে লতা মঙ্গেশকর, জন আব্রাহাম, দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে যেন অবসান একটি যুগের। তাইতো দিলীপ সাবের (Dilip Kumar) মৃত্যুতে এবার পুরোপুরি একা হয়ে গেলেন সায়রা বানু। ৫৪ বছর ধরে একে অপরের সঙ্গে থেকে, নিজেদের পরিপূর্ণ করেন দিলীপ কুমার, সায়রা বানু। তাই তো, শেষ সময়ে এসেও দিলীপ সাবকে একা ছাড়েননি তাঁর প্রিয় সায়রা।
দিলীপ কুমার, সায়রা বানুর ভালবাসার গল্প চমকে দেবে অনেককেই। দুজনের বয়সের তফাৎ ২২ বছরের হলেও, সায়রা যেন সব সময় তাঁর দিলীপ সাবকে আকড়ে রাখতেন। কোনও ঝড় ঝাপটা গায়ে লাগতে দিতেন না তাঁর দিলীপ সাবের।
অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারে জন্ম নেন মহম্মদ ইউসুফ খান। পরবর্তীকালে যিনি দিলীপ কুমার নামে পরিচিত হন। ১৯৪৪ সালে জোয়ার ভাটা নামে একটি ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন দিলীপ কুমার। এরপর আন্দাজ, মুঘলে আজম সহ একের পর এক ব্লক বাস্টার দিয়ে বলিউডে ট্রাজেডি কিং হিসেবে পরিচিত হন দিলাপ কুমার। অন্যদিকে জঙ্গলি দিয়ে বি টাউনে শাম্মি কাপুরের হাত ধরে পা রাখেন সায়রা বানু (Saira Banu)। এরপর, দুনিয়া, বৈরাগ, গোপী, সাগিনা-সহ একের পর এক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন দিলীপ কুমার, সায়রা বানু। ৩৪ বছরে দিলীপ কুমার যখন বলিউডে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সুপারস্টার তকমা নিয়ে, সেই সময় তাঁর ভালবাসায় মশগুল হয়ে পড়েন সায়রা বানু। মাত্র ১২ বছর বয়সে ৩৪-এর দিলীপের প্রেমে পড়েন সায়রা। মুঘলে আজমের সময় বছর ষোলোর সায়রা ভালবেসে ফেলেন দিলীপ কুমারকে। মুঘলে আজমের প্রিমিয়ারে সায়রা যখন ১৬ বছরের, সেই সময় দিলীপ কুমারের দেখা চেয়েও পাননি তিনি।
এরপর দিলীপ কুমারের সঙ্গে প্রথম দেখা হলে, সায়রা যেন আবেগে ভেসে যান। দিলীপ তাঁর দিকে তাকালে, তিনি নিজেকে সুন্দরী বলে মনে করতে শুরু করেন। এরপরই সায়রা বুঝতে পারেন, তিনিই ভিবষ্যতে দিলীপ কুমারের সহধর্মিনী হতে চলেছেন।
২২ বছরের ছোট সায়রাকে বিয়ে নিয়ে প্রথমে যেন খুব একটা রাজি ছিলেন না দিলীপ কুমার। মেয়ের সঙ্গে দিলীপ কুমারের বিয়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন সায়রার মা নাসিমা বানু। এরপর ১৯৬৬ সালে দিলীপ কুমারের সঙ্গে সাতপাকে বাঁধা পড়েন সায়রা বানু। দিলীপ কুমারের সঙ্গে সায়রা বানুর বিয়ের পর তা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়। বছরের এত বড় ফারাকের জন্যই দিলীপ, সায়রার বিয়ে যেন 'টক অফ দ্য টাউন' হয়ে ওঠে। এরপর ১৯৭২ সালে প্রথম গর্ভপাত হয় সায়রা বানুর। প্রায় ৮ মাস ধরে যন্ত্রণা ভোগ করেন সায়রা। গর্ভপাতের ওই কঠিন সময়ের পর সায়রা আর মা হতে পারেননি। এরপর ১৯৭৬ সালে সায়রা বানু স্থির করেন, এবার তিনি ঘর সামলাবেন। ফলে অভিনয় জীবন থেকে সরে আসেন সায়রা। দিলাপ কুমারও সমর্থন করেন স্ত্রীর সিদ্ধান্তকে।
দিলীপ কুুমার তাঁর বংশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইতেন। সায়রা আর মা হতে পারবেন না, ওই কথা জানার পর একের পর এক মহিলার সঙ্গে নাম জড়ায় দিলীপ কুমারের। তেমনি হায়দরাবাদে একটি ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন দিলীপ কুমার আসমা রহমানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আসমাকে বিয়েও করেন দিলীপ কুমার। বিয়ের দু বছরের মধ্যে ফের আসমার সঙ্গে দিলীপ কুমারের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। আসমা রহমানের সঙ্গে বিচ্ছোদের পর দিলীপ কুমার ফের সায়রা বানুর কাছে ফিরে আসেন।
এ বিষয়ে সায়রা বানুকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি জানান, দিলীপ কুমার তাঁরে কাছে অনন্য। তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেননি। তাই সায়রা বানুকে যখন তিনি ফের আপন করে নেন, তখনও তিনি কোনও আপত্তি জানাননি। সায়রা ফিরে যান তাঁর দিলীপ সাবের কাছে। শুধু তাই নয়, কিশোরী বয়স থেকেই দিলীপ কুমারকে বিয়ে করে সংসারের স্বপ্ন দেখতেন। একজন অনুরাগী থেকে দিলীপ কুমারের স্ত্রী হতে পেরেছেন, তা ভাবলেই, তাঁর মনের সমস্ত ক্লেশ কেটে যেত বলেও অকপটে জানান সায়রা বানু। অনেক সুন্দরী দিলীপ কুমারকে বিয়ে করতে চাইতেন কিন্তু তাঁকে বেছে নেন ইউসুফ সাব। ফলে তাঁর স্বপ্ন সত্যি হয়ে ওঠে। আর এই স্বপ্নকেই সারা জীবন ধরে তিনি লালন করেন বলেও জানান সায়রা বানু।
গোটা জীবন ধরে দিলীপ কুমারের সঙ্গে থেকেছেন সায়রা বানু। গত কয়েক মাস ধরে বার বার অসুস্থ হতে শুরু করেন দিলীপ সাব। কোনও সময়ই তাঁকে একা ছাড়েননি সায়রা। প্রত্যেকবার হাসপাতালে যাওয়া থেকে শুরু করে তাঁর বাড়ি ফেরা পর্যন্ত, কোনও সময় দিলীপ সাবকে কাছছাড়া করেননি সায়রা বানু। তবে ৯৮-তে এসে দিলীপ সাব যেন এক্কেবারে সায়রা বানুকে একা করে দিয়ে চলে গেলেনে না ফেরার দেশে।