কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সোনা চুরির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করার পর ৩ জনের বিপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে পুলিশ। ২০২৩ সালের এপ্রিলে টরন্টো পিয়ারসন বিমানবন্দর থেকে কয়েক মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (১৪.৫ মিলিয়ন ডলার/ প্রায় ১২১ কোটি টাকা) মূল্যের ৬,৫০০ এরও বেশি সোনার বার চুরি হয়েছিল। অভিযুক্ত চালককে কয়েক ডজন বন্দুক সহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে যে কানাডায় সেই বন্দুক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। এছাড়া পুলিশ জানিয়েছে, নেটফ্লিক্স সিরিজের ধাঁচে চুরির ঘটনাটি ঘটিয়েছে এই সুসংগঠিত অপরাধীদের দল। এখনও কানাডিয়ান পুলিশের তদন্ত চলছে। বুধবার কানাডিয়ান পিল রিজিওনাল পুলিশ এবং ইউএস অ্যালকোহল, টোব্যাকো অ্যান্ড ফায়ারআর্মস ব্যুরো বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম সোনা চুরির কথা ঘোষণা করে। বছরব্যাপী এই যৌথ তদন্তের সাংকেতিক নাম দেওয়া হয়-প্রোজেক্ট ২৪কে (Project 24K)। এতে কয়েক ডজন সার্চ ওয়ারেন্ট এবং সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। Georgia Parliament: জর্জিয়ার সংসদে হাতাহাতি থেকে হামলা, দেখুন জনপ্রতিনিধিদের মারামারির ভিডিয়ো
এ পর্যন্ত পুলিশ ৯০ হাজার কানাডিয়ান ডলারের 'খাঁটি সোনা' উদ্ধার করেছে, যেগুলো দিয়ে ছয়টি অপরিশোধিতভাবে ব্রেসলেট তৈরি করা হয়েছে। তারা ছাঁচ এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রির পাশাপাশি নগদ ৪ লক্ষ ৩০ হাজার ডলার বাজেয়াপ্ত করেছে। পুলিশের ধারণা এটা সোনা বিক্রির মুনাফা। গত সেপ্টেম্বরে পেনসিলভানিয়া পুলিশ অন্টারিওর এক ব্যক্তিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করে, পরে জানা যায় সেই ব্যক্তি ওই দলের ড্রাইভর। পুলিশ ডুরান্টে কিং-ম্যাকক্লিন (২৫) নামে ওই ব্যক্তিকে ফিলাডেলফিয়ায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের গ্রেপ্তার করে পরে তার গাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে।
ফিলাডেলফিয়ার এটিএফের স্পেশাল এজেন্ট এরিক ডিগ্রি বলেন, 'ওই আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর একটিতে প্রায় মিটে যাওয়া সিরিয়াল নম্বর ছিল, এর মধ্যে ১১টি চুরি হওয়া বন্দুক এবং এর মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিনগানে রূপান্তর করা হয়েছে।' পুলিশ জানিয়েছে, ওই বন্দুকগুলি কানাডায় আমদানির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়। পিল পুলিশ সার্ভিস বোর্ডের চেয়ারম্যান নান্দো ইয়ানিক্কা বলেন, 'এটা শুধু সোনা চুরির বিষয় নয়, সোনা কীভাবে বন্দুক হয়ে যায় সেটাই আসল। (This isn't just about a gold heist, this is about how gold becomes guns)' পুলিশ বলছে, আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের অভিযোগে ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে হেফাজতে রয়েছেন।
কি ঘটেছিল সেদিন?
১৭ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ থেকে এয়ার কানাডার একটি ফ্লাইটে পণ্য পৌঁছানোর পর একটি কার্গোর ভিতরে চুরির ঘটনা ঘটে। পুলিশের অভিযোগ, অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ভুয়ো এয়ারওয়ে বিল দেখিয়ে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। এরপর পাঁচ টনের একটি লরি দিয়ে প্রায় ৪০০ কেজি (৮৮১ পাউন্ড) ওজনের সোনা চুরি করা হয়। চুরির কয়েক মাস পরে, পণ্যগুলির চালান সমন্বয় করার কারণে মার্কিন-ভিত্তিক সুরক্ষা সংস্থা ব্রিঙ্কস ইন্টারন্যাশনাল এয়ার কানাডার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।মামলার এজাহারে বলা হয়, বিমান থেকে নামানোর ৪২ মিনিট পর সোনা চুরি হয়। যে পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা হল প্রমপাল সিধু (৫৪), অমিত জালোটা (৪০), আম্মাদ চৌধুরী (৪৩), আলি রাজা (৩৭) এবং প্রসাথ পরমালিঙ্গম (৩৫)। কানাডাজুড়ে সিমরান প্রীত পানেসর (৩১), অর্চিত গ্রোভার (৩৬) এবং আরসালান চৌধুরীর (৪২) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।