আজ রথযাত্রা। সকাল থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে শহর থেকে জেলায়। আর সেই বৃষ্টি মাথায় করেই পুরী থেকে দিঘায় ভক্তদের ভিড়। শুধু তাই নয়, বঙ্গের জেলায় জেলায় বেশ কিছু রথযাত্রাও বেশ খ্যাত। আজকের এই পুণ্য দিনে রইল বিভিন্ন ক্ষেত্রের রথযাত্রার বিবরণ-
মাহেশের রথযাত্রা ২০২৫-
৬২৯তম বর্ষে পদার্পণ করল পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী মাহেশ রথযাত্রা উৎসব। দিঘার নবনির্মিত মন্দির প্রচারের আলো কেড়ে নিলেও ৬২৯ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য, পরম্পরা ও সংস্কৃতি নির্ভর মাহেশ রথযাত্রা উৎসবে ভাটা পড়েনি এতটুকুও।আজ সকাল থেকেই উৎসব মুখর পরিবেশ গোটা মাহেশ চত্বর জুড়ে। বিকাল ৪টে মাহেশে শুরু হবে রথের দড়িতে টান। জি টি রোড ধরে মাহেশ জগন্নাথ মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মাসির বাড়িতে পৌঁছে যাবে রথ।
মল্লভুমে রথযাত্রাঃ-
প্রাচীন মল্লভুমে রথ উৎসব ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস। আজও সেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে সাড়ম্বরে পালিত হলো মল্ল রাজাদের প্রাচীন রথ উৎসব। প্রাচীন রীতি মেনেই মল্লগড় বিষ্ণুপুরে ৩৫০ বছরের বেশী প্রাচীন রথের রশিতে টান দিলেন অগনিত ভক্ত। রথে সওয়ার হলেন ঠাকুর রাধা মদন গোপাল জিউ। আজ রাজা নেই কিন্তু রাজাদের অস্তিত্ব আজও টিকে রয়েছে মল্লগড়ের মাটিতে। আর সেই প্রাচীন ইতিহাস কে বাঁচিয়ে রেখে রথ উৎসব কে পালন করে চলেছেন মাধবগঞ্জের উৎসব কমিটি।
মায়াপুর রথযাত্রাঃ-
আজ নদীয়ার মায়াপুর ইসকনের রাজাপুর জগন্নাথ মন্দির মন্দির থেকে দুপুর দুটোই রথের রশিতে টান পড়বে। রাজাপুর থেকে তিনটি সুসজ্জিত রথ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের প্রধান কার্যালয় মায়াপুরে অস্থায়ী গুন্ডিচা মন্দির এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে । ওই পথে এলাকায় জগন্নাথ দেবকে পুজো দেওয়ার সুযোগ থাকে। শোভাযাত্রায় চৈতন্য ঘরানার নিত্য কীর্তন হয়। বর্ণাঢ্য রথের এই শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার মানুষ সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন।এবারে অস্থায়ী গণ্ডিচা মন্দির স্থাপন করা হয়েছে পঞ্চতত্ত্ব মন্দিরে। সেখানেই ৫ই জুলাই পর্যন্ত জগন্নাথ দেব অবস্থান করবেন। চলবে ৫৬ ভোগ, দ্বীপ দান, জগন্নাথ অষ্টকম স্তোত্র পাঠ, ভজন ,কীর্তন সহ নানা অনুষ্ঠান। এখানকার রথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার পূর্ণার্থী যোগদান করার বর্তমানে এই রথ আন্তর্জাতিক রূপ পেয়েছে।
মহিষাদলের রথযাত্রাঃ-
ভারতে একমাত্র কাঠের রথ হল মহিষাদলের প্রাচীন এই রথ। মহিষাদলের রথ মদনগোপাল জিউ-র রথ নামে খ্যাত।মদনগোপল জিউর সঙ্গে থাকেন জগন্নাথ ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ। আগে সতেরো চূড়া রথ ছিল। এখন তেরো চূড়া রথ হয়েছে। তেরো চূড়া রথের ঢাকার উচ্চতা ৪ ফুট। বেধ ৮ ইঞ্চি ও পরিধি ১২ ফুট। লোহার পাত দিয়ে মোড়া মোট ৩৪টি চাকা আছে। রথের উচ্চতা প্রায় ৫৫ ফুট। তবে কলস ও ধ্বজা দিয়ে সাজানো হলে উচ্চতা ৭০ ফুটের বেশি হয়ে যায়।
গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা
বাংলার প্রসিদ্ধ রথগুলির মধ্যে প্রাচীন এবং অন্যতম হুগলির বলাগড়ের গুপ্তিপাড়ার রথযাত্রা। ১৭৪০ সালে শুরু গুপ্তিপাড়ার রথ বৃন্দাবন জিউ রথ নামে পরিচিত। সারা বছর জগন্নাথ দেব বৃন্দাবন জিউ মন্দিরে থাকেন। রথযাত্রায় বৃন্দাবন মন্দির থেকে জগন্নাথ,বলরাম আর সুভদ্রা রথে চড়ে যান প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোসাঁইগঞ্জ-বড়বাজারে মাসির বাড়ি যান। গুপ্তিপাড়া রথযাত্রার একটি নিজস্ব বিশেষত্ব হল ভান্ডার লুট। উল্টোরথের আগের দিন হয় ভান্ডার লুট।