মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুল মান্নান ও সুজন চক্রবর্তী(File Photo)

কলকাতা, ১০ জুলাই: লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Elections 2019) ফলপ্রকাশের পর থেকেই সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছিল। গোটা দেশে বিজেপি (BJP)-র ঐতিহাসিক সাফল্যের পর দেশের বিরোধী দলগুলির অবস্থা খারাপ। মহারাষ্ট্র (Maharashtra) থেকে কর্নাটক (Karnataka), অসম (Assam) থেকে রাজস্থান (Rajasthan)। দেশের সর্বত্র পদ্ম আর পদ্ম। এমন সময় কংগ্রেস তো বটেই, আঞ্চলিক দলগুলির অবস্থা একেবারে কোণঠাসা। পশ্চিমবাঙলাও তার ব্যতিক্রম নয়। ১৮টি লোকসভা আসনে জিতে এবার বাংলায় ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন বিজেপি-র।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী-সর্বত্র বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন অমিত শাহ-নরেন্দ্র মোদির চোখে। এমন একটা সময়ে পরিস্থিতিই কাছাকাছি আনবে তৃণমূল-কংগ্রেস-সিপিএমকে, এমনটাই বলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তেমনই হল। সংসদ থেকে শিলিগুড়ি-বিভিন্ন জায়গাতেই এখন তৃণমূল-কংগ্রেস-বাম দলগুলিকে পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে। আরও পড়ুন-ইডি ও সিবিআইএর ডাক পেয়েছেন টলিগঞ্জের এই অভিনেতা অভিনেত্রীরা

গতকাল সংসদে ৪২টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেলগ্নিকরণের প্রতিবাদে তৃণমূল-কংগ্রেস-বাম নেতাদের তো একবারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে দেখা যায়। বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি না হলেও, দিল্লিতে যে তৃণমূল-কংগ্রেস-বাম নেতাদের মধ্যে অলিখিত জোট হয়ে গিয়েছে সেটা পরিষ্কার। তবে সেটা মানতে নারাজ এই তিন দলের কোনও নেতাই।

অন্যদিকে, যে শিলিগুড়িতে একটা সময় তৃণমূল-সিপিএম সম্পর্কটা সাপে নেউলের চেয়েও খারাপ ছিল, সেখানেই দুই দলকে পাশাপাশি দেখা গেল, সঙ্গে হাসিমুখে যোগ দিল কংগ্রেসও। শিলিগুড়ি শহরে পরিবেশ বাঁচানোর ডাক দিয়ে মিছিল করেছে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল। মিছিলে হাঁটেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, তৃণমূলের মন্ত্রী গৌতম দেব ও কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার। যদিও বিষয়টা যেহেতু পরিবেশ, তাই তাকে অরাজনৈতিক বলে চালানোর মরিয়া চেষ্টা চলেছে সবপক্ষই। আসলে তলে তলে চেষ্টা চললেও, এখনও যেহেতু শীর্ষ নেতৃত্বের সম্মতি নেই, তাই তিন দলের কেউই বিষয়টাকে জোট বলতে রাজি নয়। কারণ তাতে ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারে।

তৃণমূল-বাম-কংগ্রেস নেতারা যতই জোটের প্রশ্ন এড়িয়ে যান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যা তাতে তিন দলকে একসঙ্গে চলতেই হবে। আগামী দিনে কঠিন লড়াই বিরোধীদের। নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে সংখ্যা অনেক। তবে মোদির ওপর প্রত্যাশাও অনেক। তাই মোদি সরকারের সামান্য ভুলে জনগনের মনে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। সেটা কাজে লাগানোর গুরুভারটা দেশের কোনও একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের আর নেই। মোদি ঝড়ে তছনছ হয়ে যাওয়া বিরোধী শিবিরকে এখন টিকে থাকতে হলে হাত ধরতেই হবে। রাজ্যের পরিস্থিতিটা অবশ্য কিছুটা অন্য়।

রাজ্যে বিজেপি-র চমকপ্রদ ফলের পিছনে সিপিএম-কংগ্রেস ভোটব্যাঙ্কের একটা বড় অংশ চলে যাওয়াটা বড় ফ্যাক্টার হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক মহলের ধারনা ২০১৬ বিধানসভায় পাওয়া বামেদের ভোটব্য়াঙ্ক ফের লাল শিবিরে ফিরলেই মমতা ব্যানার্জি ২০২১ নির্বাচনে বাজিমাত করবেন। তাই সিপিএমের সঙ্গে দূরত্ব বজায় থাকলে আখেরে লাভ মমতার। তবে এটাও ঠিক গোটা দেশের যে কোনও নির্বাচনেই এখন সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টার নরেন্দ্র মোদি। সেখানে রাজ্যের যুযুধান তিনপক্ষের তলেতলে জোট হলে অবাক হওয়ার থাকবে না।