কালীপুজোর রাতে মাতৃশক্তির আরাধনায় মেতে ওঠে বর্ধমান শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ি।দামোদর নদের তীরে এই মন্দির ঘিরে বহু লোককথাই প্রচলিত। তবে বেশি প্রচলিত রাজকন্যা বিদ্যার সঙ্গে তরুণ পুজারি সুন্দরের প্রেম কাহিনী। লোকগাঁথা বলে, বিদ্যা এবং সুন্দরের প্রাণরক্ষা করেছিল মাতৃশক্তি। সে কাহিনি অমর করে রাখতেই নাকি একদা এই মন্দিরের নাম বদলে হয় বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ি।

লোকমুখে শোনা যায়, বর্ধমানের মহারাজ তেজ চাঁদের সময় ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল দামোদর তীরবর্তী তেজগঞ্জ এলাকা। এখানেই মা কালীর পুজো করতেন রাজা। মন্দিরে দেওয়া হত নরবলি। অন্যায় অত্যাচার করলে রাজা তাদের মন্দিরে নিয়ে এসে নরবলি দিতেন দেবীর সামনে। সেই সময় এই মন্দিরের নাম ছিল দক্ষিণ মশানী কালী। আর এই মন্দিরেরই পূজারি ছিলেন- জনৈক সুন্দর।

কথিত রয়েছে, তেজ চাঁদের আমলে বর্ধমানে রাজার মন্দিরগুলিতে রাজকন্যা বিদ্যার হাতে গাঁথা মালা প্রতিদিন নিয়ে যেতেন মালিনি মাসি। তেমনি একদিন তিনি ফুলের মালা নিয়ে যান মশানী কালী মন্দিরে। সেই মালা দেখেই পূজারি মালিনি মাসির কাছে জানতে চান, এমন সুন্দর মালা কে গেঁথেছেন? মালিনি মাসির কাছে তিনি জানতে পারেন রাজকন্যা বিদ্যার কথা। বিদ্যার সঙ্গে তাঁর দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন মালিনি মাসিকে।

কথিত আছে, তাঁকে দেখার জন্য পূজারি এই মন্দির থেকে রাজবাড়ি পর্যন্ত সুরঙ্গ পথ তৈরি করেছিলেন। সেই সুরঙ্গ পথ দিয়েই বিদ্যার সঙ্গে দেখা করতে যেতেন সুন্দর। গোপনে শুরু হয় তাঁদের প্রেম। কিন্তু, এই প্রেম কাহিনি বেশিদিন গোপন থাকেনি।

রাজা প্রেমের কথা জানতে পেরে বিদ্যা-সুন্দরের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন। বলি দেওয়ার জন্য তাঁদের নিয়ে আসা হয় দক্ষিণ মশানী মন্দিরে। কথিত আছে, কালীমন্দিরে বলি দেওয়ার সময় তাঁদের রক্ষা করেন মা কালী। বলি দেওয়ার আগের মুহূর্তে জ্ঞান হারান কাপালিক। আর সেই সুযোগে নিরুদ্দেশ হয়ে যান বিদ্যা ও সুন্দর।

স্থানীয়েরা জানিয়েছে, যুগলের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখতে দক্ষিণ মশানী মন্দিরের নামকরণ হয়েছিল বিদ্যাসুন্দর কালীবাড়ি। শোনা যায়, ডাকাতদের নরবলির প্রথাও নাকি দেবীর নির্দেশেই বন্ধ করেন রাজা। বর্তমানে কালীপুজোয় ছাগ বলি হয় মন্দিরে। নিত্য পুজোয় মাছ ছাড়া হয় না মায়ের ভোগ। জমিদারী না থাকলেও গ্রামের মানুষের উৎসাহে এ মন্দিরে কালীপুজোর আয়োজনের বাহুল্য আজও অঢেল!