কলকাতা, ১৭ মার্চ: প্রকাশ হল তৃণমূল কংগ্রেসের ইশতেহার (TMC Manifesto)। কালীঘাট থেকে দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইশতেহার প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১১০ শতাংশ কাজ করেছি। যে কাজ করেছি, সারা পৃথিবীর নজর কেড়েছে। কন্যাশ্রীকে ইউনিসেফ ১ নম্বর প্রকল্পের পুরস্কার দিয়েছে। ১০০ দিনের কাজে আমরাই দেশের মধ্যে প্রথম। ১ কোটি ৭৫ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি করেছে রাজ্য।" তিনি বলেন, "লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার জন্য একবছরে অনেক কাজ পিছিয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও অন্য রাজ্যের তুলনায় আয় বেড়েছে। বাংলার বাজেট ৩ গুণ বেড়েছে। রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণ বেড়েছে।"
এক নজরে তৃণমূল কংগ্রেসের ইশতেহার:
- দেশের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। জিডিপি-র আয়তন ১২.৫ লক্ষ কোটি টাকা ও বার্ষিক মাথাপিছু
আয় ২.৫ লক্ষেরও বেশি।
- ৩৫ লক্ষ মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার। দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষ ২০১১-র ২০%
থেকে কমিয়ে ৫%-এর নীচে।
- বার্ষিক ৫ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান, বেকারত্বের হার অর্ধেক।
- পর্যটনে শীর্ষ ৩ রাজ্যের মধ্যে স্থানাধিকার।
- বছরে দু’বার অনুষ্ঠিত হবে দুয়ারে সরকার ও পাড়ায় সমাধান।
- হাই-পারফরম্যান্স ডেলিভারি ইউনিট গড়ে তুলে সুনিশ্চিত করা হবে সকল জরুরি পরিষেবার কার্যকারিতা।
- বিধান পরিষদের পুনর্গঠন।
- বাংলার প্রত্যেক পরিবারের ন্যূনতম মাসিক আয় সুনিশ্চিত করার জন্য নতুন প্রকল্প- ১.৬ কোটি যোগ্য
পরিবারের কর্ত্রীকে মাসিক আর্থিক সহয়তা - মাসিক ₹৫০০ করে জেনারেল ক্যাটেগরি (বার্ষিক ৬,০০০ টাকা)
ও ₹১,০০০ করে তফসিলি জাতি ও উপজাতি পরিবারকে (বার্ষিক ১২,০০০ টাকা)।
- সম্প্রদায়ের বা ভৌগলিক অঞ্চলের দ্রুত বিকাশের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ।
- ১০ লক্ষ নতুন স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে সাশ্রয়ী ঋণ।
- শিক্ষার উন্নত সুযোগের জন্য নতুন স্কুল খোলা।
- চা বাগান অঞ্চল এবং কর্মীদের জন্য বিশেষ ইন্টারভেনসন।
- মডেল নন্দীগ্রাম’ গড়ে তোলা হবে।
- নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর দেশ গড়ার অবদানের প্রতি সম্মান জানাতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু স্মৃতিসৌধ
নির্মাণ করা হবে।
- ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বন্যা ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের সমাপ্তি।
- বাংলার যুবদের স্বাবলম্বী করতে সকল যোগ্য পড়ুয়াদের জন্য নতুন প্রকল্প - স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ১০
লক্ষ ক্রেডিট লিমিট ৪% সুদ।
- সরকারি দফতরগুলিতে ১০,০০০ ইন্টার্নশিপের সুযোগ।
- ১.১ লক্ষ সরকারি চাকরি প্রদানের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
- আইএএস / আইপিএস পরীক্ষার জন্য ১০০ জন শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ।
- খাদ্য সাথীর আওতায় নতুন সুবিধা - আর রেশন দোকানে যেতে হবে না। ১.৫ কোটি পরিবারকে দুয়ারে
মাসিক রেশন বিনামূল্যে সরবরাহ।
- ৫০টি শহর জুড়ে ২,৫০০ ‘মা’ ক্যান্টিনের মাধ্যমে, ৭৫ কোটি ভর্তুকিযুক্ত খাবার ৫ টাকায় পরিবেশন করা হবে।
এখানে ক্লিক করে পড়ুন তৃণমূলের ইশতেহার। চাইলে ডাউনলোডও করতে পারেন।
- ১০ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে রেশন প্রদান করা হবে।
- কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে বার্ষিক ১০,০০০ টাকা একর পিছু সহায়তা, ৬৮ লক্ষ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে।
- নেট বপন ক্ষেত্র ও শস্য ব্যবস্থায় ৩ লক্ষ হেক্টর চাষযোগ্য জমি যোগ এবং ৪.৫ লক্ষ হেক্টরে দু-ফসলি চাষ
ব্যবস্থায় দেশে প্রথম স্থানাধিকার।
- আগামী ৫ বছরে রাজ্য খাদ্যশস্য ও তামাক উৎপাদনে নিজেদের স্থান আরও উন্নীত
করবে, চা, পাট ও আলু উৎপাদনে প্রথম স্থান ধরে রাখার পাশাপাশি।
- প্রতি জেলায় নির্দিষ্ট শস্যের জন্য মেগা/মিনি ফুড পার্ক তৈরি করবে, কোল্ড চেন ও কোয়ালিটি চেকিং সুবিধার সাথে।
- খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে, কৃষি ফলন বাড়াতে বিভিন্ন সমবায় সমিতিগুলিতে ফার্মমেশিনারি হাবস
(কাস্টম হায়ারিং সেন্টার) স্থাপন করা হবে। এই লক্ষ্যে এখনও পর্যন্ত ৩৭৯টি সমবায় সমিতিকে ১০৮.৭০
কোটি সহায়তা করা হয়েছে।
- যৌথ পরিষেবার অগ্রগতির উৎসাহ-প্রদান। শিল্পোন্নয়নের সুফল জনসাধারণের কাছে নিয়ে গিয়ে এবং বিকেন্দ্রীকৃত
অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে, রাজ্য সরকার এমএসএমই-র সংখ্যা আগামী ৫ বছরে প্রতি বছর ১০ লক্ষ
বৃদ্ধি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে সামগ্রিকভাবে ১.৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছনো যায়।
- দ্রুত শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজন বিবেচনা করেই কারখানার সর্বমোট সংখ্যা বাড়িয়ে ১২,০০০ ইউনিটের বেশি করা হবে। ৫ লক্ষ কোটি নতুন বিনিয়োগ আগামী ৫ বছরে।
- রাজ্যের শিল্প ও অর্থনৈতিক কর্মসূচির সকল ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিপ্লবের শক্তি আনতে উচ্চাভিলাষী নীতি ও
কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
- স্বাস্থ্যে ব্যয় বরাদ্দ দ্বিগুণ, রাজ্য জিডিপি-র ০.৮৩% থেকে বেড়ে ১.৫%। ২৩টি জেলা সদরে মেডিকেল কলেজ ও সম্পূর্ণ কার্যকরী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল।
- ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকদের জন্য আসন সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে। ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গ প্রথম দশের মধ্যে রয়েছে। প্রথম পাঁচ রাজ্যের মধ্যে থাকতে রাজ্য শিক্ষার খাতে ব্যয় বরাদ্দ করবে ৪%।
- ব্লক প্রতি অন্তত ১টি মডেল আবাসিক স্কুল
- শিক্ষকদের জন্য আসন সংখ্যা দ্বিগুণ। পেশাদার শিক্ষকদের জন্য আসনের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ৬২,০০০-এরও বেশি করবে যা শিক্ষার্থীদের জন্য দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত এবং স্বাস্থ্যকর অগ্রগতি বাড়িয়ে তুলবে।
- সরকার রাজ্যের মেয়েদের উচ্চশিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগগুলি সুরক্ষিত করার জন্য ইতিমধ্যে বিদ্যমান কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রসার ঘটাতে আগ্রহী। এই স্কিমটিকে ‘কন্যাশ্রী প্লাস’ হিসাবে উল্লেখ করা হবে।
- ‘তরুণের স্বপ্ন’-এর আওতায় প্রতি বছর দ্বাদশ শ্রেণির ৯ লাখ শিক্ষার্থীকে ১টি করে ট্যাবলেট প্রদান।
- পার্শ্ব-শিক্ষকদের পারিশ্রমিক বার্ষিক ৩% বৃদ্ধি করার প্রস্তাব। এছাড়াও, ৬০ বছর পূর্ণ করার
পরে তাঁদের অবসরকালীন সুবিধা হিসাবে এককালীন অনুদান ৩ লক্ষ দেওয়া হবে।
- পশ্চিমবঙ্গ দক্ষতা বিকাশ সোসাইটিতে (পিবিএসএসডি) যোগদান বাড়ানো।
- সমস্ত ২৭৮টি সরকারি শিল্প প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলিতে (আইটিআই) স্মার্ট শ্রেণিকক্ষ বানানো।
- সকলের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বিদ্যালয় ও কলেজের পড়ুয়া ও শিক্ষককে ডিজিটালি সমৃদ্ধ শিক্ষা দেওয়া হবে।
- সৃজনশীল শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু তৈরি করা হবে বাংলা এবং অন্যান্য প্রধান ভাষায়, রাজ্যের
শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
- . সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষাব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা
- বাংলার বাড়ি প্রকল্পে আরও ৫ লক্ষ স্বল্প মূল্যের আবাসন। বস্তিবাসীর সংখ্যা ৭% থেকে কমিয়ে ৩.৬৫% রাজ্যে বস্তিবাসীর পরিমাণ ৭%। বস্তিবাসীদের জনসংখ্যা ৩.৬৫% এর নীচে নামিয়ে আনতে রাজ্য ২৭.৫ লক্ষ মানুষের থাকার জন্য ৫ লক্ষ ঘর নির্মাণ করবে।
- আরও ২৫ লক্ষ স্বল্প মূল্যের বাড়ি বাংলা আবাস যোজনার আওতায়। কাঁচা বাড়ির সংখ্যা ১%-এরও কম ‘বাংলা আবাস যোজনা’-র আওতায় এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩.৬২ লক্ষ বাড়ির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এবং ২১.৮২ লক্ষ বাড়ি সম্পূর্ণ হয়েছে। বাংলায় সবার জন্য ছাদ সুনিশ্চিত করতে এবং গ্রামাঞ্চলে কাঁচা বাড়ির সংখ্যা ১% এর নীচে নামিয়ে আনতে, আগামী ৫ বছরে অতিরিক্ত ২৫ লক্ষ স্বল্প মূল্যের পাকা বাড়ি তৈরি করা হবে।
- আরও ৪৭ লক্ষ পরিবারকে নলযুক্ত পানীয় জল। ২৬% থেকে বেড়ে ১০০% পরিষেবা সুনিশ্চিত ১০০% শহুরে পরিবারকে পাইপযুক্ত জল সরবরাহের লক্ষ্যে আরও ৪৭ লক্ষ শহুরে পরিবারকে পাইপযুক্ত পানীয় জলের সুবিধা দেওয়া হবে। সরকার পশ্চিমবঙ্গে আগামী পাঁচ বছরে ২ কোটি পরিবারকে ₹৫৮,০০০ কোটি ব্যয় করে (প্রতি বছর ₹১১,৬০০ কোটি) পাইপযুক্ত পানীয় জল সরবরাহ করার ঘোষণা করেছে।
- ২৪x৭ সুলভ মূল্যে বিদ্যুৎ প্রতিটি বাড়িতে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সফলভাবে ১০০% বৈদ্যুতি করণ অর্জন করেছে, আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য রাজ্যের সমস্ত নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ২৪x৭ বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখা।
- প্রতিটি গ্রামীণ আবাসের জন্য মজবুত রাস্তা, উন্নত জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং নলযুক্ত পানীয় জল আমাদের সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ২ কোটি পরিবারের জন্য পাইপযুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করার কথা ঘোষণা করেছে। আমাদের সরকার গত দশ বছরে রাজ্যে ১,১৮,১২৮ কিলোমিটার নতুন রাস্তা তৈরি করেছে। এই অগ্রগতিকে ধরে রেখে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে, সরকার সমস্ত গ্রামীণ পরিবারকে সড়কের সাথে সংযুক্ত করবে। আমাদের সরকার অসংযুক্ত আবাসগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের রাস্তা তৈরি করবে।
- রাস্তার উন্নতি এবং সুরক্ষাকে মূল অগ্রাধিকার দেওয়া হবে আগামী ৫ বছরে, আমরা ‘পথশ্রী প্রকল্পের আওতায় ৪৬,০০০ কিলোমিটার নতুন গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করব এবং আমরা সমস্ত গ্রামীণ সড়কগুলিকে রাজ্য হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করব। রাজ্যে ৩৭৩টি পু রাতন সেচ ও নিকাশি খালের উপর কাঠের সেতুর পরিবর্তেনতুন কংক্রিট ব্রিজ তৈরি করা হবে। আমরা সমস্ত হাইওয়েতে সুগমযোগ্য দূরত্বে কার্যকর ট্রমা কেয়ার ইউনিট স্থাপন করব।
- সংরক্ষণ, কৃষি ও পরিবহণের জন্য জলসম্পদ জল ধরো, জল ভরো-র আওতা বাড়ানো হবে। রাজ্যের সমস্ত চাষযোগ্য জমিতে সেচের জল পৌঁছবে। জার্মানির রাইন নদীর মতো উচ্চমানের পদ্ধতিতে রাজ্যের ২৯৫টি নদী এবং শাখা- প্রশাখা ব্যবহার করে মাল্টি-মডেল পরিবহণ ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এতে পরিবহণ ব্যবস্থা সহজলভ্য হবে এবং পর্যটন ব্যবস্থার অগ্রগতি হবে।
- আর্সেনিকমু ক্ত পানীয় জল নিশ্চিত করার জন্য একটি টাস্ক ফোর্স স্থাপন করা হবে রাজ্য সরকার একটি টাস্কফোর্সগঠন করবে যা আর্সেনিক আক্রান্ত অঞ্চলের জন্য পৃ ষ্ঠতল জল ভিত্তিক নলযুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। রাজ্যের ৮৩টি ব্লক এবং ৭টি জেলা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ১.৯৮ কোটি মানুষ যারা জলে পাওয়া আর্সেনিকের জন্য সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এই টাস্কফোর্স৬৫,০০০ গ্রামে পরিশ্রুত পাইপযুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্পগুলির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে পর্যবেক্ষণ করবে।
- চেক বাঁধ, খনন কূপ ও খামার পু কুর খনন করা রাজ্য প্রয়োজনীয় সমস্ত জায়গায় চেক বাঁধ নির্মাণ, কূপ খনন এবং খামার পুকুর খননের জন্য বিনিয়োগ করবে। ঘূর্ণিঝড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুর্যোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি এটি আশেপাশের গ্রামগুলিতে গৃ হকর্মএবং কৃষিকাজের জন্য জল সরবরাহকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে।