মাঠে মাঠে কাশ ফুলের বন, আকাশে ভেজা তুলোর মতো মেঘ বাঙালির ঘরের মেয়ে উমার আগমনী বার্তা দিচ্ছে। পাড়ার সর্বজনীন পুজো থেকে পুরোনো জমিদার বাড়ির পুজো সর্বত্রই এখন সাজো সাজো রব।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী বনেদিবাড়ির পুজা গুলির মধ্যে অন্যতম পতিরামের জমিদার বাড়ির পূজা। একসময় জমিদার বাড়ির পূজার যে জৌলুস ছিল এখন আর নেই। ঘোষ বাড়ির ছয় পুরুষ ধরে এই দুর্গাপূজা হয়ে চলছে। রামসুন্দর ঘোষ চালের ব্যবসা করতেন। আত্রেই নদীতে নৌকা নিয়ে তিনি আসতেন পতিরাম অঞ্চলে। ব্রিটিশ আমলে রামসুন্দর ঘোষ পতিরামে একটি বাড়ি বানান এবং ধীরে ধীরে জমিদারি প্রাপ্ত হন। জমিদারি স্থাপনের পাশাপাশি পতিরামে শুরু করেন দুর্গাপুজো। সেই সময় এলাকায় একমাত্র পুজো হওয়ার ফলে গ্রামের লোক তো বটেই দূর-দূরান্ত থেকেও সাধারণ মানুষ ও জমিদার বাড়ির সকলেই এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে থাকতেন। পুজোর কয়েকদিন ধরে চলত মঙ্গলচণ্ডী গান। পুরনো রীতি রেওয়াজ মেনে এখনও পুজো হলেও নেই আগের মত জৌলুস। দিন গেছে জমিদারি আর নেই। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জমি নিয়ে নিয়েছে সরকার। এখন ঘোষ বাড়ির অধিকাংশই চাকরিজীবী।
পতিরাম জমিদার বাড়ি ঘোষ বাড়ি বলেই পরিচিত। পতিরামের ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় সাত পুরুষ আগে শুরু হয়েছিল। সঠিক বয়স বলতে না পারলেও কম করে তা ২০০ - ২৫০ বছরের পুরনো। প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজোর মধ্য দিয়ে দুর্গাপুজোর শুভ সূচনা হয় পতিরামের ঘোষ জমিদার বাড়িতে। পুজোর জাঁকজমক জমিদারবাড়িতে আগের মত আর নেই। বলিদান প্রথা উঠে গেছে।শুধুমাত্র নিয়ম মেনে নারায়ন পূজা চন্ডী পূজা এবং দেবী দুর্গার আরাধনা করা হয়।
পাঁচদিনের পূজাতে পতিরাম এলাকায় সে সময় একটা উৎসবের আমেজ থাকত। তার কারণ বালুরঘাট পতিরাম এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জমিদারবাড়ি এই একটি পূজাই সেই সময় চালু ছিল। কবি গান, মনসামঙ্গল, যাত্রা এইসবের আয়োজন হতো পুজোর পাঁচদিন। এখন এসব অতীত। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর আত্মীয়-স্বজন আসতেন একসময়। এখন আর তা হয় না। এখন পুজোর পাঁচদিন উৎসবের থেকে মিলন মেলা বেশি ঘোষ পরিবারে। সারাবছর কর্মসূত্রে যারা বাইরে থাকেন সকলেই ফেরেন। বৃদ্ধ দম্পতি পথ চেয়ে বসে থাকেন এই পাঁচটি দিনের জন্য। পুজো আর মাত্র হাতে গোনা কয়েক দিন। ঠাকুর মন্ডপে প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে। বাড়ি ঝাড়পোঁছ এর কাজও চলছে জমিদার বাড়িতে। পুজো কদিনের আনন্দে মাততে উদগ্রীব জমিদার পরিবার।