Barsul Dey Bari Durga Puja Photo Credit: Youtube@ Mira_Bhakat

পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাচীন গ্রাম বড়শূল।প্রায় ৩০০ বছর ধরে এই গ্রামে বাস করছে দে পরিবার। তাঁদের বিশাল বাড়ি সাক্ষী রয়েছে দুর্গা পুজোর এক অনন্য ইতিহাসের সঙ্গে।শুধু বাড়ি নয় রয়েছে গৃহ দেবতার ঠাকুরদালান। বাড়িটির স্থাপত্যে রয়েছে গ্রীক ও ব্রিটিশ প্রভাব। কথিত আছে প্রায় ২৫০ বছর আগে এই জমিদার বাড়ির এক সদস্য গৌড়প্রসাদ দে প্রথম স্বপ্নে আদেশ পান মায়ের পুজো করার জন্য। সেই থেকেই সূচনা এই দুর্গাপুজোর যা আজও সমান ভাবে সমান নিষ্ঠার সঙ্গে হয়ে চলেছে।

প্রাচীন এই জমিদার বাড়িতে কেমন ভাবে পূজিত হন মা দুর্গা?

মহিষাসুরমর্দিনী রূপে নয় মা এখানে পূজিত হন হরগৌরী রূপে।একবার তীর্থযাত্রীদের একটি দল গঙ্গাসাগরে যাওয়ার পথে দামোদর লাগোয়া বড়শুল গ্রামে তাঁদের ছাউনি করে। দে পরিবারে আশ্রয় নিতে আসে তারা। কথিত আছে, ওই তীর্থযাত্রী দলের একসাধুর ঝুলিতে ছিল অনেকগুলি মূর্তি। দে পরিবারের এক কিশোরী পছন্দ করে হরগৌরী মূর্তি। সেই থেকে দে পরিবারের মন্দিরে ঠাঁই পান হরগৌরী। তারপর থেকে নিয়মনিষ্ঠা সহযোগে হরগৌরীর পুজো হয়ে আসছে বড়শুলের এই জমিদার বাড়িতে।

দে পরিবারের এক সদস্য জানালেন এক চালার ডাকের সাজের প্রতিমায় মা দুর্গা পূজিত হন হরগৌরী রূপে। বাঘছাল পরিহিত শিবের বাম উরুতে বসে থাকেন দুই হাত বিশিষ্ট দেবী দুর্গা। শিবের ডান দিকে থাকেন লক্ষ্মী গণেশ বাঁদিকে থাকেন সরস্বতী কার্তিক। প্রতিমা দেখলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে গ্রাম বাংলার দৃশ্য এক ঝলকে মনে হবে যেন বাংলার কোন কন্যা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে এসেছেন সন্তান-সন্ততি ও স্বামীকে নিয়ে। দে বাড়ির কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। ঐদিন কাঠামো পুজো করে শুরু হয় মূর্তি গড়া।  শারদ ষষ্ঠীতে হয় মায়ের বোধন। পুজোর দিনগুলিতে অন্ন ভোগ দেওয়া হয় না মাকে, বদলে মাকে নিবেদন করা হয় লুচি্ত‌রকারি ,বোদ্‌ মিহিদানা। এছাড়া ভোগে থাকে নানা রকমের ফল।পুজোতে  পাঠা বলি দেওয়া হয়। অষ্টমীর দিন হয় ধুনো পোড়ানো।  দশমীর দিন সকালে পুজো মন্ডপে পরিবারের সবাই সূচিবস্ত্র পড়ে বেল পাতায় দুর্গা নাম লিখে মায়ের পায়ের কাছে রাখে।  দশমীর সন্ধ্যায় সিঁদূর খেলার পর হরগৌরী মূর্তিকে সারা গ্রাম ঘুরিয়ে কাছের জলাশয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়

জমিদারি আমলে ছিল প্রচুর বৈভব ও প্রাচুর্য্য। বর্তমানে জমিদারি না থাকলেও ঐতিহ্য মেনে প্রতি বছর পুজো হয় বড়শূলের দে বাড়িতে। প্রাচীন সেই জমিদার বাড়ির দুর্গাদালানটি আজও বহন করে চলেছে দুর্গাপুজোর স্মৃতি। ২৫০ বছরের প্রাচীন পুজো দেখতে আজ ও ভিড় জমান মানুষজন।