
পার্থ প্রতিম চন্দ্র: ৩৩ বছরের প্রোটিয়া ক্রিকেটার হেনরিক ক্লাসেন (Heinrich klaasen)। কিংবা ২৯ বছরের ক্যারিবিয়ান তারকা নিকোলাস পুরান (Nicholas Pooran)। আইপিএলে মাতিয়ে দিলেও দেশের হয়ে খেলা ছাড়লেন ক্লাসেন, পুরান। অথচ আইপিএল প্রমাণ করছে দুজনেই যা ফর্ম ও ফিটনেসের তুঙ্গে আছেন। দুজনেই অনায়াসে জাতীয় দলের হয়ে আরও অনেকটা সময় চুটিয়ে খেলতে পারতেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার ইচ্ছাটা যেন দ্রুত ফিরিয়ে যাচ্ছে তারকা ক্রিকেটারদের। একবার বাদ পড়লে বা বোর্ডের সঙ্গে বনিবনা না হলেই ক্রিকেটাররা দেশের হয়ে আর খেলার ইচ্ছা ছেড়ে দিচ্ছেন। অথচ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে জাভাগল শ্রীনাথ কিংবা বব সিম্পসন থেকে কার্ল হুপারের মত তারকা ক্রিকেটার লড়াই না ছেড়ে তুলনায় অনেক বেশি বয়সে জাতীয় দলে কামব্যাক করছেন। কিন্তু সৌরভদের মত জাতীয় দলে ফেরার মরিয়া লড়াইটা এখন তারকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের চলে গিয়েছে। ভারত বা এশিয়ার দেশগুলি ছাড়া প্রায় সর্বত্রই, বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
কেন ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে
কিন্তু কেন এই প্রবণতা? একেবারে সহজ কথা হল- ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হাতছানি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট-ইন্ডিজের মত বাইশ গজের প্রথম সারির দেশগুলি তো আছেই, সঙ্গে ইউএই, কানাডা, আবুধাবিতেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে মোট অর্থ রোজগার করা যায়। এখানেই শেষ নয়- নিউ জিল্যান্ড, পাকিস্তান, বাংলাদেশ,নেপালেও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে প্রচুর অর্থ উপার্জনের সুযোগ পান ক্রিকেটাররা। সারা বছর জুড়েই কোথাও না কোথাও ফ্র্য়াঞ্চাইজি ক্রিকেট চলে। ভারতে যেমন আইপিএল শুরু হয় মার্চে, শেষ হয় মে মাসে। দক্ষিণ আফ্রিকায় SA20 লিগ চলে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে চলে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-২০ লিগ (বিগ ব্যাশ ও সিপিএল)। এভাবেই জানুয়ারি থেকে জানুয়ারি- বছরের ১২টি মাসের মধ্যে অন্তত সাড়ে ১০ মাস চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। শুধু ফ্র্য়াঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেই ক্লাসেন বা পুরানের মানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বছরে অনায়াসে ৪০-৫০ কোটি টাকা রোজগার করতে পারেন। পরিযায়ী ক্রিকেটার হয়ে এ দেশ-ওদেশ ঘুরে অনায়াসে তারা ধনী থেকে ধনীতম হয়ে যান। অর্থের পাশাপাশি খ্যাতিও মেলে খুব। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দেশের জার্সির চাপ, পারফরম্যান্সের ধকল, বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব—এসব থেকেও অনেকটাই মুক্ত থাকা যায়।
ফ্র্য়াঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে কত রোজগার করা যায়
অবশ্য তার মানে এটা নয় যে ফ্র্য়াঞ্চাইজি ক্রিকেটে পারফম না করলেও অর্থ মিলে যায়। ভারতে একজন তারকা ক্রিকেটার মাস দুয়েকের টুর্নামেন্ট খেলে গড়ে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা রোজগার করেন। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে রোজগার করা যায় ১০-১২ কোটি টাকা। এবার বছরের বাকিটা সময়ে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র (MLC), ইউএই থেকে কানাডা, নেপাল, বাংলাদেশর লিগে খেলেও ৮-১০ কোটি টাকা রোজগার হয়েই যায়। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের হয়ে সারা বছরে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটাররা গড়ে রোজগার করেন বড়জোড় ২ কোটি টাকা। এই যেমন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক সাই হোপ গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলে গড়ে বছরে সাড়ে ৩ কোটি টাকা রোজগার করেন। তার মধ্যে চুক্তি বিতর্ক, বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে পারিশ্রমিক নিয়ে চাপান-উতর সবই সহ্য করতে হয়েছে হোপকে।
আইপিএল বনাম দেশের ক্রিকেট খেলে রোজগার
সেখানে নিকোলাস পুরান শুধু আইপিএলে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে খেলে এবারের আইপিএল থেকে রোজগার করেছেন ২১ কোটি টাকা। সঙ্গে পেয়েছেন বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের চুক্তিও। সঙ্গে পুরান মোটা টাকার চুক্তিতে খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিপিএল, আমেরিকার এমএলসি (MLC)-তেও। দক্ষিণ আফ্রিকার হেনরিক ক্লাসেন সান রাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলে এবার রোজগার করেছেন ৩ কোটি টাকা। টানা দেশের হয়ে খেলে এই অর্থ রোজগার করতে হলে ক্লাসেনের লেগে যেত বছর পাঁচেক। পাঁচ বছর টানা খেলার ঝক্কিও অনেক। আইপিএলে একটা-দুটো মরসুমে খারাপ খেলেও রোজগারে টান পড়ে না। কিন্তু দেশের হয়ে খেলতে গেলে ঝামেলা অনেক, ফর্ম ধরে রাখার চাপ বেশ। এইসব কারণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন খেলার তাগিদটা কমে আসছে তারকা ক্রিকেটারদের।