
Karun Nair: ডিয়ার ক্রিকেট, গিভ মি ওয়ান মোর চান্স (প্রিয় ক্রিকেট, আমায় আরও একটা সুযোগ দাও)। জাতীয় দলের লড়াই থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাওয়ার পর বছর তিনেক আগে আবেগতাড়িত এমন আবেদনই করেছিলেন কর্ণাটকের করুণ নায়ার। ঘরোয়া ক্রিকেটে বাইশ গজে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করে নিজেই সেই সুযোগটা করে নিলেন করুণ। আট বছর পর দেশের হয়ে টেস্ট খেলার জন্য ডাক পেলেন তিনি। আসন্ন ইংল্যান্ড সফরে টেস্ট ক্রিকেটে টিম ইন্ডিয়ার স্কোয়াডে জায়গা পেলেন ৩৩ বছরের করুণ নায়ার। ত্রিশতরান করেও মাত্র ৬টি টেস্ট খেলেই জাতীয় দল থেকেই বাদ পড়েছিলেন করুণ। ২০১৭ সালের মার্চে ধরমশালায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্টে ন্য়াথান লিঁয়-র বলে ৫ রানে আউট হওয়ার পর বাদ পড়েছিলেন করুণ। এবার ২০২৫ সালের ২০ জুন, লিডসে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে খেলতে পারেন ৩৩ বছরের বিদর্ভের হয়ে খেলা কর্ণাটকের তারকা ব্যাটার।
৬টা টেস্ট খেলে একটা ত্রিশতরান করেও বাদ পড়েছিলেন
এর মাঝে কত দল নির্বাচন, কতজন এসেছেন, কতজন গিয়েছেন, কিন্তু নায়ারের হাল বারবার করুণই হয়েছে। একটা সময় অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন দেশের হয়ে ৬টি টেস্ট খেলেই শেষ হবে তাঁর ট্র্যাজিক কেরিয়ার। কিন্তু গত মরসুমে বিদর্ভের হয়ে খেলে রঞ্জি ট্রফিতে অবিশ্বাস্য করেছিলেন করুণ। রঞ্জির গত মরসুমে বিদর্ভের করুণের নেতৃত্বই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে করুণ ৮৬৩ রান করেছিলেন, ব্যাটিং গড় ৫৩-এর বেশি। রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে কেরালার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ৮৬ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৫ রান করে বিদর্ভের ট্রফি জয়ে সবচেয়ে বড় কারিগর হন। রঞ্জি ট্রফির মত বিজয় হাজারে ট্রফিতে অবিশ্বস্য সাফল্য পান করুণ। দেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে টানা চারটি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটার হন। তিনি এই টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী (৭৭৯ রান) , গড়ে ৩৮৯.৫০ হন। আরও পড়ুন- টেস্ট অধিনায়কত্বে শুভমন গিল, একনজরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের স্কোয়াড
ঘরোয়া ক্রিকেটে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েন
দীর্ঘ তিন বছর আইপিএলে ফিরে প্রথম ম্য়াচেই দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ৪০ বলে ৮৯ রান করেছিলেন করুণ। এত ঈর্ষণীয় রেকর্ডের পর আর তাঁকে সুযোগ না দেওয়ার উপায় ছিল না। বিরাট কোহলির পর অবসরের সরফরাজ খানকে বাদ দিয়ে করুণ নায়ারের ওপরেই ভরসা রাখলেন নির্বাচকরা। এই প্রথম কেরিয়ারে বিদেশের মাটিতে টেস্টে খেলার সুযোগ পেতে চলেছেন করুণ। ইংল্যান্ডে প্রথম টেস্ট থেকেই পাঁচ নম্বরে খেলানো হতে পারে তাঁকে।
করুণ নায়ারের সেই 'গিভ মি ওয়ান মোর চান্স' টুইট
Dear cricket, give me one more chance.🤞🏽
— Karun Nair (@karun126) December 10, 2022
উল্কার গতিতে উত্থান, ধুমকেতুর গতিতে পতন
২০১৬ সালের নভেম্বরে করুণ নায়ারের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মোহালিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪ রানে আউট হয়েছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পাননি করুণ। এরপর সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ওয়াংখেড়েতে মাত্র ১৩ রানে আউট হন। অনেকেই এরপর ভেবেছিলেন তাঁকে আর সুযোগ নাও দেওয়া হতে পারে। কিন্তু চেন্নাইয়ে ইতিহাস লেখে তার ব্য়াট। প্রথম ইনিংসে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪৮১ বলে ৩০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেন করুণ। ভারতীয় ক্রিকেটে বীরেন্দ্র সেওয়াগের পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ত্রিশতরান করেন করুণ। ইংল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজের মাস চারেক পরেই অস্ট্রেলিয়া আসে ভারতে।
কীভাবে বাদ পড়েন
অজিদের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে করুণকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। কিন্তু স্টিভ স্মিথদের বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরু, রাঁচি ও ধর্মশালা-তিনটি জায়গাতেই একেবারে ব্যর্থ হন কর্ণাটকের তারকা ব্যাটার। তিন টেস্টে চারটি ইনিংস মিলিয়ে একটি শূন্য সহ করুণ করেছিলেন মাত্র ৫৪ রান, গড় মাত্র ১৩। তাঁর ব্যাটিং টেকনিক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের মার্চে অজি সিরিজের পর সেই যে বাদ পড়েছিলেন তিনি আর সুযোগ পাওয়ার ধারেকাছে ছিলেন না। কিন্তু কথায় বলে, পরিশ্রম এমন একটা জিনিস, অধ্যাবসায় এমন একটি জিনিস, আর ইচ্ছাশক্তি এমন একটি জিনিস, যেগুলো মিশে একে হয়ে গেলে, অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়, করুণ নায়ারদেরও প্রত্যাবর্তন হয়। ভারতীয় ক্রিকেটে মহারাজকীয় কায়দায় প্রত্যাবর্তনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর করুণের নামটাও ঢুকে গেল। এবার দেখার সুযোগটা কতটা কাজে লাগাতে পারেন করুণ।