কলকাতা: ভাই-বোনের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে আমাদের দেশে রাখি উত্সব পালন হয়ে থাকে। রাখির সুতোয় আরও গভীর বন্ধনে আবদ্ধ হয় ভাই-বোনের সম্পর্ক। এই বছর ৩০ অগাস্ট পালিত হবে রাখি পূর্ণিমা (Raksha Bandhan 2023)।
ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছালে ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাকে দুটি প্রদেশে বিভক্ত করবে। ব্রিটিশ সরকারের এই বিরূপ সিদ্ধান্ত বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু ও মুসলিম ভাই ও বোনকে একতা হওয়ার আহ্বান জানান। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সবাইকে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার জন্য আহ্বান করেন। সে সময় সাম্প্রদায়িকতা মেটাতে রবীন্দ্রনাথ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রাখি বন্ধন উৎসব প্রচলন করেন।
তবে রাখিকে ভাই-বোনের উত্সব হিসেবে মনে করা হলেও ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, পুরুষকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে তার হাতে সুতো বেঁধে দিতেন মহিলারা। এটাই পরে রাখি বন্ধন উত্সবে পরিণত হয়। এখন অবশ্য জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন ধরনের রাখি উৎসব পালন করা হয়, সেটা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে| প্রতি বছর শ্রাবন মাসের পূর্ণিমার দিন বোনেরা তাদের ভাইদের হাতের কব্জিতে সুন্দর সুন্দর রাখি বেঁধে দেয় যা ‘নিরাপত্তা ও রক্ষা বন্ধন’ চিহ্ন হিসেবে মনে করা হয়। আরও পড়ুন : Ajker Rashifal, 1 August 2023: স্বাস্থ্য থেকে পরিবার,চাকরি থেকে ব্যবসা,কেমন যাবে আপনার দিন? জানুন আজকের রাশিফল
রাখি বন্ধনের নেপথ্যের ইতিহাস
সুভদ্রা কৃষ্ণের ছোট বোন, কৃষ্ণ সুভদ্রাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তবে দ্রৌপদী আপন বোন না হয়েও কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন ছিলেন। একদিন সুভদ্রা কিছুটা অভিমান ভরে কৃষ্ণকে এর কারন নিয়ে প্রশ্ন করেন। উত্তরে কৃষ্ণ বললেন, যথা সময়ে এর কারন তুমি বুঝতে পারবে। কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত পড়ছিল, তা দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধের জন্য কাপড় খুঁজছিলেন, কিন্তু মন মত পাতলা সাধারন কাপড় পাচ্ছিলেন না, এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে আসলেন, তিনি বিন্দুমাত্র দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে নিজের মুল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেধে দিলেন, কিছুক্ষন পর রক্তপাত বন্ধ হল। তখন শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রাকে ডেকে বললেন- এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি? সুভদ্রা বুঝতে পারল ভক্তি ও পবিত্র ভালবাসা, শ্রদ্ধা কি জিনিস! দাদার চেয়ে মুল্যবান বস্ত্র নিজের কাছে বেশি প্রিয় এটা ভেবে সুভদ্রা দারুন লজ্জিত হন।
ভাই বোনের সম্পর্ক খুব মধুর, একে অপরের পাশে থাকার, যেরকম শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষা করেছিলেন, এবং দ্রৌপদী ভাইয়ের আঘাত সারাতে নিজের দামি কাপড় ছিঁড়তে এক মুহূর্ত ভাবেননি। তবে বর্তমান কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতার এই যুগে ভাই বোনের মধ্যে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার বড় অভাব দেখা দিচ্ছে। তাই সকল ভাইবোনের উচিত এই দিনে মনে এরকম ভক্তিভাব ও ভালবাসা বজায় রাখার মনভাব বজায় রাখার চেষ্টা করা।
রাখি বন্ধন ২০২৩- তারিখ
হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রতি বছর শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় রাখি বন্ধন উৎসব। এবার শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথি দুই দিন অর্থাৎ ৩০ ও ৩১ আগস্ট পড়ছে, পাশাপাশি ভাদ্র মাসের ছায়া শ্রাবণ পূর্ণিমা তিথিতে থাকবে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, ভাদ্রের ছায়া থাকলে কখনোই রক্ষাবন্ধন উৎসব পালিত হয় না। ভাদ্র মাসে বোনদের ভাইয়ের কব্জিতে রাখি বাঁধতে নিষেধ। ভাদ্র কালের সময়টিকে খুবই অশুভ বলে মনে করা হয় এবং এই সময়ে কোনো শুভ কাজ করা হয় না। সে কারণে এ বছর রক্ষা বন্ধনের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
রাখি বন্ধনে ভাদ্রের ছায়া কতদিন থাকবে?
এ বছর রক্ষা বন্ধনের দিনে ভাদ্র পৃথিবীতে অধিবাস করবে, যার কারণে ভাদ্রে রাখি বাঁধা শুভ হবে না। অন্যদিকে শ্রাবণ পূর্ণিমা শেষ হবে ৩১ আগস্ট সকাল ৭টা ০৭ মিনিটে। ৩০ আগস্ট সকাল 0৯.0৩ মিনিট পরে ভাদ্র শুরু হওয়ার আগে এবং ৩১ আগস্ট সকাল 0৭:0৭ এর আগে রাখি বাঁধা যেতে পারে।
ভাদ্র কি জানেন?
ধর্মীয় গ্রন্থ ও শাস্ত্র অনুসারে, ভাদ্র শনিদেবের বোন এবং ভগবান সূর্য ও মা ছায়ার সন্তান। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ভাদ্রের জন্ম হয়েছিল অসুরদের বিনাশ করার জন্য। ভাদ্রের জন্ম হলে, জন্মের পরপরই তিনি সমগ্র বিশ্বকে নিজের মূর্তি বানাতে শুরু করেন। এভাবে ভাদ্রের কারণে যেখানেই শুভ ও শুভকাজ, যজ্ঞ ও আচার-অনুষ্ঠান করা হয়, সেখানেই ঝামেলা শুরু হয়। এ কারণে ভাদ্র পালিত হলে কোনো শুভ কাজ করা হয় না।