প্রতীকি ছবি (Photo Credits: File Image)

ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi)। নামের মধ্যেই কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ লুকিয়ে রয়েছে। কালী পুজোর (Kali Puja) আগের রাতটাকেই বলা হয় 'ভূত চতুর্দশী।'এ বছর ২৬ অক্টোবর 'ভূত চতুর্দশী।' কিন্তু কেন পালন করা হয় এই রীতি? হিন্দু পুরাণ বলছে, এই তিথিতে সন্ধ্যে (Evening) নামার পর পরই অশরীরী প্রেতাত্মারা (Ghost) বের হন। আর তাদের হাত থেকে নিস্তার পেতেই এদিন সন্ধ্যার পর গৃহস্থের বাড়িতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালানো (Lamp) হয়ে থাকে। এটাই নিয়ম।

এটা মূলত বাঙালি হিন্দুর উৎসব। কারণ বাংলা ছাড়া ভারতের অন্যান্য রাজ্যে হিন্দুরা সেভাবে এই 'ভূত চতুর্দশী' উদযাপন করে না। পশ্চিম ভারতে এই তিথিকে ‘নরক চতুর্দশী’(Naraka Chaturdashi) বলে। আধুনিক যুগে ভূত চতুর্দশী পালনকে অনেকেই অবৈজ্ঞানিক ও কুসংস্কার বলে থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগ বাঙালি পরলোকগত পিতৃপুরুষের আত্মার সদ্গতি কামনায় প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা এই প্রথাকে খুব সাড়ম্বরে পালন করে থাকেন। অনেকে বলে থাকেন 'ভুত চতুর্দশী'র দিন পরলোকগত চৌদ্দ পুরুষের আত্মারা নিজ নিজ বাড়িতে নেমে আসেন। তাই তাদের আসা যাওয়ার পথকে আলোকিত করতেই নাকি এই দিন সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বলানোর রীতি। আবার ভিন্ন মতে, চামুণ্ডারূপী চৌদ্দখানা ভূত দিয়ে ভক্তবাড়ি থেকে অশুভ শক্তিকে তাড়াবার জন্যে মা কালী নেমে আসেন। তবে যে মতটি সর্বাধিক প্রচলিত তা হল, নরকাসুররূপী রাজা বলি সাধনবলে শক্তি অর্জন করে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিলেন। এমনকি দেবতারাও তার সঙ্গে পেরে উঠছিলেন না। এমন অবস্থায় দানব রাজা বলির (Raja Bali) তাণ্ডব থামাতে দেবগুরু বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণুকে (Lord Vishnu) উপায় বের করতে বললেন। তখন বামন রূপে ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির কাছে এসে তিন পা জমি ভিক্ষা চান। দানবরাজ বলি প্রথমেই বুঝেছিলেন এই বামন আর কেউ নন, স্বয়ং বিষ্ণু। কিন্তু এরপর না বোঝার ভান করে তিনপদ জমি দানের চুক্তিতে রাজি হন। ভগবান বিষ্ণু তাঁর দু’পা দিয়ে স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে নেন। তারপর নাভি থেকে তৃতীয় পা বের করে রাখলেন বলি রাজার মাথার উপর, আর বলিকে ঠেলে দিলেন পাতালে। সেই থেকে পাতালই হল বলির বাসস্থান। আরও পড়ুন: যক্ষ্মা আক্রান্তের নিরিখে শীর্ষে ভারত! তবে বিগত বছরে যক্ষ্মা আক্রান্তের হার কমেছে বিশ্ব জুড়ে, বলছে WHO

কিন্তু 'ভূত চতুর্দশী'র সঙ্গে বলিরাজার সম্পর্ক কী? বলিরাজ জেনে বুঝেও দান করেছিলেন বলে, ভগবান বিষ্ণু রাজা বলির নরকাসুর রূপের পুজোর প্রবর্তন করেন। নরকাসুররূপী রাজা বলি কালীপুজোর আগের দিন 'ভূত চতুর্দশী'র তিথিতে অসংখ্য ভূত-প্রেত অনুচর নিয়ে মর্ত্যে নেমে আসেন পুজো নিতে। আর মর্ত্যবাসীরা তাঁদের দূরে রাখতে ১৪ শাক খেয়ে, ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ১৪ ফোঁটা দিয়ে এই তিথিকে উদযাপন করে থাকেন। এই ১৪ শাক হল- ওল, বেতো, সরষে, নিম, গুলঞ্চ, শুষণী, হিলঞ্চ, জয়ন্তী, শাঞ্চে, কালকাসুন্দে, পলতা, ভাটপাতা, কেঁউ, এবং শৌলফ।