
স্বাস্থ্যই সম্পদ—এই প্রবাদটি কেবল কথার কথা নয়, বরং মানবজীবনের ভিত্তি। শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা ছাড়া একটি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ বা জাতি কখনোই সঠিকভাবে এগোতে পারে না। আর এই স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতেই প্রতি বছর ৭ই এপ্রিল পালিত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস (World Health Day)। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) উদ্যোগে এক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দিবস, যা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা বিষয় ও সমস্যা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে। এদিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবেও বিবেচিত হয়, যা ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। স্বাস্থ্যকে মানব জীবনের মূল স্তম্ভ হিসেবে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যই এই দিনটি আন্তর্জাতিকভাবে পালন করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো সার্বিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি। সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো ও রোগপ্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে অবগত করা। WHO প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য ইস্যুকে সামনে এনে সেই বিষয়ে গবেষণা, সচেতনতা ও কার্যক্রম চালায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন একসঙ্গে কাজ করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব:
* স্বাস্থ্যসেবা সবার অধিকার:
স্বাস্থ্যসেবা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা মনে করিয়ে দেয়।
প্রতি বছর একটি ভিন্ন থিম বা বিষয় বেছে নেওয়া হয়—মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইত্যাদি। এর মাধ্যমে সমাজের গুরুত্বপূর্ন ও অবহেলিত দিকগুলোকে সামনে আনা হয়। এ দিনটি গবেষক,ডাক্তার ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন ও সমাধান নিয়ে ভাবনার সুযোগ করে দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস একটি সচেতনতামূলক দিন হলেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সুস্থতা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক দায়িত্বও বটে। তাই, আমরা সবাই মিলে যদি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হই।
প্রতি বছরের থিম:
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম নির্ধারণ করা হয়, যেটি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা তুলে ধরে:
2020: "Support Nurses and Midwives"
2021: "Building a Fairer, Healthier World"
2022: "Our Planet, Our Health"
2023: "Health For All"
2024: "My Health, My Right"
2025:"Healthy beginnings, hopeful futures"
এই থিমগুলো সমাজের নানা স্বাস্থ্যবিষয়ক সংকটকে সামনে নিয়ে আসে এবং ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করে।
বিশ্বজুড়ে পালনের ধরন:বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ক্যাম্পের আয়োজন। জনসচেতনতামূলক সেমিনার ও র্যালি। শিশু,নারী ও প্রবীণদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা। অনলাইন ক্যাম্পেইন, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার। বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচি। গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশ-এই ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের গুরুত্ব শুধু এক দিনের জন্য নয়, বরং বছরের প্রতিটি দিন আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বাস্থ্য কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। সুস্থ মানুষই গড়ে তোলে এক শক্তিশালী সমাজ, আর সেই সমাজ গড়ে তোলে উন্নত বিশ্ব। “আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার”—এই বার্তাই হোক আমাদের আগামী দিনের পথচলা।