১০ মহররম ২০২৫ঃ আরবি সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখকে পবিত্র আশুরা বলা হয়। আশুরা আরবি শব্দ; আশারা থেকে শব্দটির উৎপত্তি। এর অর্থ হচ্ছে দশ।সৃষ্টির আদি থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে আশুরার তাৎপর্য স্বীকৃত।হিজরি সনের প্রবর্তন মহররম মাসকে আরও বেশি স্মরণীয় করেছে।
মহরম ২০২৫ কত তারিখে?
গত ২৬ জুন ১৪৪৭ হিজরি সনের পবিত্র মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে শুক্রবার (২৭ জুন) থেকে মহররম মাস গণনা শুরু হবে। সে অনুযায়ী ৬ জুলাই পবিত্র আশুরা পালিত হবে। অর্থাৎ বলা যায় ২০২৫ সালের মহরম পালিত হবে আগামী রবিবার ৬ জুলাই।
আশুরা কি?
এই দিনটি ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালার যুদ্ধে নবী মুহাম্মদের নাতি ইমাম হুসাইনের শাহাদাতকে স্মরণ করে। আশুরা হল শিয়া মুসলমানদের জন্য একটি গৌরবময় দিন, যা ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, যা সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতীক।কারবালার হৃদয়বিদারক মর্মান্তিক ঘটনা আশুরা ও মহররমের ইতিহাসে নবচেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে এবং মহররম ও আশুরাকে আরও বেশি মহিমান্বিত ও অবিস্মরণীয় করে রেখেছে
আশুরার ইতিহাসঃ-
আশুরার উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে—হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ ইত্যাদি। হজরত নূহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রারম্ভ এবং বন্যা অবস্থার সমাপ্তি ছিল আশুরাকেন্দ্রিক।
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পাওয়া, হজরত ইউনুছ (আ.)-এর মাছের পেট থেকে মুক্ত হওয়া, হজরত দাউদ (আ.)-এর জালুত বাহিনীর ওপর বিজয় লাভ করা, হজরত আইয়ুব (আ.)-এর ১৮ বছর অসুস্থতার পর রোগমুক্ত হওয়া, হজরত ঈসা (আ.)-কে আকাশে তুলে নেওয়াসহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী আশুরা।
কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২—এর মধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৩৬)। হাদিস শরিফে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘অতিসম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ চার মাস’ বলতে জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব—এই চার মাসকে বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে মাজহারি, সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৩৬)।
আশুরার রোজা পালন?
আশুরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো রোজা পালন করা। এই রোজা সব নবী-রাসুলের আমলেই ছিল। প্রিয় নবী (সা.) মক্কা মুকাররমায় থাকতে আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জানতে পারলেন, এদিনে মুসা (আ.) সিনাই পর্বতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এদিনই তিনি বনি ইসরায়েলকে ফেরাউনের কয়েদখানা থেকে উদ্ধার করেন এবং এদিনই তিনি বনি ইসরায়েলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর ফেরাউন সেই সাগরে ডুবে মারা যান। তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য ইহুদিরা এই দিন রোজা রাখেন।
আশুরার তাৎপর্য:
আশুরার তাৎপর্য ন্যায়বিচার, করুণা এবং স্থিতিস্থাপকতার মতো সর্বজনীন মূল্যবোধের স্মারক হিসেবে কাজ করে। এটি মুসলিমদেরকে ব্যক্তিগত মূল্য নির্বিশেষে অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ইমাম হুসেনের নীতিগুলি নিয়ে চিন্তা করতে উৎসাহিত করে। শিয়া এবং সুন্নি উভয় মুসলিমই আশুরা পালন করে, যদিও স্বতন্ত্র রীতিনীতির সাথে। শিয়া মুসলিমরা শোক অনুষ্ঠান পালন করে, কালো পোশাক পরে এবং ইমাম হুসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং শোক প্রকাশের জন্য সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। সুন্নি মুসলিমরা নবী মুহাম্মদের ঐতিহ্য অনুসরণ করে কৃতজ্ঞতা এবং আধ্যাত্মিক প্রতিফলনের নিদর্শন হিসেবে আশুরার দিন উপবাস করে।