করোনা আবহেই বাঙালি মেতে উঠেছিল দুর্গোৎসবে (Durga Puja 2020)। করোনা বিধি মেনে উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়লেও পরিবার-পরিজন নিয়ে পুজোর চারটে দিন আনন্দে মেতে উঠেছিল সবাই। দুর্গাপুজোর রেশ কাটিয়ে ঘরে ঘরে হয়েছে লক্ষ্মীর (Lakkhi Puja 2020) বন্দনা। এবার কালীপুজোর (Kali Puja 2020) পালা। শাস্ত্রমতে, এবছর ১৪ নভেম্বর কালীপুজো। কালীপুজোর আগের দিন ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi 2020) পালিত হয়; তবে বাংলা ক্যালেন্ডার মতে, ২৮ কার্তিক ভূত চতুর্দশী পালন করা হবে।
করোনা আবহে বাড়িতেই রীতি মেনে আচার অনুষ্ঠানে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন সকলে। ভূতচতুর্দশীতে ১৪ বাতি ও ১৪ শাক খাওয়ার রীতি রয়েছে, কেন জানেন? জেনে নিন এই রীতির নেপথ্যে থাকা আসল কারণ। শুভ দিনের সূচনায় কালীপুজোর আগের দিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়, খাওয়া হয় ১৪ শাকও। শাস্ত্রমতে, অশুভ শক্তির বিনাশে এবং অতৃপ্ত আত্মার শান্তি কামনায় শাক এবং প্রদীপ জ্বালানো হয়। ঘোর অমাবস্যায় কালীপুজোর বন্দনা করা হয়, তাই অন্ধকার দূর করতেই এই প্রদীপ জ্বালানোর রীতি রয়েছে।
অন্যদিকে অক্টোবর-নভেম্বরে ঋতু পরিবর্তন হয়, হালকা শীতের আমেজে কাবু হয় বাংলা। সেই কারণে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে খাওয়া হয় শাক। ১৪ শাকের মধ্যে রয়েছে- ওল, কেঁউ, বেতো, সরষে, কালকাসুন্দে, জয়ন্তী, নিম, হেলঞ্চা, শাঞ্চে, পলতা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা, শুলফা, শুষণী শাক। ১৪ শাক ধোয়ার জল ঘরের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে হয়। বিশ্বাস এতে সংসারে সুখ শান্তি ফিরে আসে এবং অন্ধকার ঘুচে নতুন আলোর সূর্য ওঠে।
এই ১৪ শাকের রোগ প্রতিষেধক ক্ষমতা সম্পর্কে জেনে নিন-
ওল- অর্শ, রক্ত আমাশা, বাত, চর্মরোগ, গ্যাস-অম্বল নাশক।
কেও- কৃমিনাশক, হজমকারক, ক্ষুধাবর্ধক।
বেতো- কৃমিনাশক, কোষ্ঠবদ্ধতা ও অম্বল প্রতিরোধক।
কালকাসুন্দা- অ্যান্টি-অ্যালার্জিক, কোষ্ঠবদ্ধতা, অর্শ, ফিসচুলা, হুপিং কাশি, দাদ ইত্যাদির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
নিম- কুষ্ঠ, যে কোন চর্মরোগ, জণ্ডিস, বহুমূত্র, একজিমার ওষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
সরিষা- মানব দেহের চামড়া, যকৃত এবং চোখের পক্ষে এই শাক অত্যন্ত উপকারি।
শালিঞ্চা বা শাঞ্চে- সাধারণতঃ ক্ষুধাবর্ধক হিসাবে পরিচিত; এদের ব্যবহারে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
জয়ন্তী- উদরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতী , জ্বর এবং কৃমি নাশকের কাজ করে। সদ্য প্রসূতিদের জন্যও এই শাক উপকারী।
গুলঞ্চ- এই শাক সেবনে বাত, রক্তচাপ, একজিমা ও জন্ডিস নির্মূল হয়। তাছাড়া গুলঞ্চ শাক পরিপাকেও সাহায্য করে।
পটুক পত্র বা পলতা- এই শাক যে কোন শ্বাসের রোগে কার্যকরী। এরা রক্তবর্ধক এবং লিভার ও চামড়ার রোগ সরাতে এদের প্রভূতভাবে ব্যবহার করা হয়।
ভন্টাকি (ঘেঁটু) বা ভাঁট- ফ্ল্যাভোনয়েড থাকার জন্য এটি ক্যানসার দমনে সহায়ক। এছাড়াও কৃমি, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার ও উদরাময় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে এই শাক সাহায্য করে।
হিলমোচিকা বা হিঞ্চে- এই শাক ভক্ষণে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। শুধুমাত্র পিত্তনাশক হিসাবেই নয়, রক্তশোধক হিসাবে, ক্ষুধাবর্ধক এবং জ্বর নির্মূলকারী হিসাবে এর ব্যবহার অপরিসীম।
সুনিষন্নক বা শুষুনী বা শুষনি- শুষনি শাক স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এরা নিদ্রাকারক, মেধা এবং স্মৃতিবর্ধক। হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য এই শাক ব্যবহৃত হয়।
শেলু বা শুলকা- এদের ব্যবহারে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে। মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে এবং ছোটদের পেটের রোগ সারাতে এই শাক অত্যন্ত উপকারি।