Photo Credit_Latestlymedia.com

ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম মানব অবতার শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন পালন করা হয় জন্মাষ্টমীতে। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন উৎসব যা বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে পবিত্র ভাদ্র মাসের অষ্টম দিন মধ্যরাতে তাঁর জন্ম হয়। সেই পুরানের গল্প প্রায় সকলেরই জানা। এবছর দৃকসিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার  ১৮ অগাস্ট অষ্টমী তিথি শুরু হয়েছে রাত ৯টা ২০ মিনিটে৷ এই তিথি থাকবে আজ ১৯ অগাস্ট রাত ১০ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত৷আজ জন্মাষ্টমীর পুণ্যলগ্নে জেনে নেব জন্মাষ্টমী সম্পর্কিত অবাক করা কিছু তথ্য-

১ জন্মাষ্টমীর সকালে  দাহি হান্ডি ( Dahi Handi) ভারতে প্রচলিত ভীষণ জনপ্রিয় একটি রীতি। এটি মূলত ভগবান কৃষ্ণের মাখন চুরির রূপক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে একটি মাখন ভর্তি হাঁড়ি মাটি থেকে ২০-৩০ ফুট উচ্চতায় টাঙানো থাকে। সেই হাঁড়ি ভাঙার জন্য একদল ছেলে মানব পিরামিড গঠন করে এবং সবার ওপরে যে থাকে সে হাঁড়িটা ভাঙে। তাকে 'গোবিন্দ' বলা হয় ও বাকিদের মন্ডল বলা হয়।

২ আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন (Isckon)  হল গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ভগবান কৃষ্ণকে তুষ্ট করাই এই প্রতিষ্ঠানের ভক্তদের জীবনের মূল লক্ষ্য। ভারতে এই সংস্থার ১৫০ টিরও বেশি মন্দির আছে। তবে এই সংস্থার ২০০৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসকনের ৫০ হাজারটিরও বেশি মন্দির এবং কেন্দ্র রয়েছে। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, বেলজিয়াম, ইউরোপ, নেপালসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ইসকন কেন্দ্র রয়েছে। সারা বিশ্ব জুড়ে ইসকনের এই মুভমেন্ট, হরে কৃষ্ণ মুভমেন্ট নামে পরিচিত।

৩ পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, ভগবান কৃষ্ণ নরকাসুর নামক এক অশুভ আত্মার কবল থেকে ১৬,১০০ জন নারীকে উদ্ধার করেছিলেন। সেইসকল নারীরা তাঁদের বাড়িতে ফিরে গেলে, তাঁদের পরিবার মেনে নেয়নি। তাই ভগবান কৃষ্ণ তাঁদের সকলের সম্মান রক্ষার্থে তাঁদের সবাইকে বিয়ে করেন।

৪ ভগবান কৃষ্ণের ১০৮টি নাম আছে যাকে অষ্টোত্তর শতনাম বলা হয়। তিনি দেবতা বিষ্ণুর অষ্টম অবতাররূপে খ্যাত। তবে তাঁকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে চিত্রায়িত করা হয়. সেই অনুযায়ী তাঁর নামকরণও হয়েছে। ১০৮টি নামের মধ্যে প্রথম পাঁচটি নাম ও তার অর্থ ব্যখ্যা করা হল-  ১. অচল তবুও প্রভু ২.অচ্যুত অচিন প্রভু ৩.অদ্ভুত বিস্ময়কর ঈশ্বর ৪.আদিদেব প্রভুর প্রভু ৫.আদিত্য অদিতির ছেলে

৫ কথিত আছে, একবার ভগবান ইন্দ্র  গোকুলের ভক্তদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে টানা সাত দিন অবিরাম বৃষ্টিপাতের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন। সেই সময় ভগবান কৃষ্ণ গোকুল ও গোকুলের জনবসতিকে রক্ষার্থে ওই সাত দিন তাঁর ছোট আঙুলের ডগায় গোবর্ধন পর্বতকে তুলে নিয়েছিলেন। সাতদিন পর ভগবান ইন্দ্রের ক্রোধ কমে গেলে বন্যার জল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করে। সেই সাতদিন তিনি কোনো আহারও গ্রহণ করেননি। বৃষ্টি থামার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই কৃতজ্ঞস্বরূপ ৫৬ টি খাবার সরবরাহ করে। জন্মাষ্টমীতেও এই পৌরাণিক কাহিনীকে কেন্দ্র করে ৫৬ ধরনের প্রসাদ প্রদানের বিখ্যাত রীতি পালন করা হয়। 'ছাপ্পান্ন ভোগ'-এর মধ্যে প্রথমে দুধের তৈরী খাবার পরিবেশন করা হয়। তারপর ১৬ ধরনের জলখাবার, ২০ ধরনের মিষ্টি এবং ২০ ধরনের শুকনো ফল দেওয়া থাকে।