প্রতীকী ছবি (Photo Credit: Latestly.com)

Bhai Phonta: মহামারী করোনার থাবায় সামাজিক দূরত্ব বিধি মানতেই হবে। কিন্তু ভাইফোঁটাতে ভাইয়েরকপালে দিদি বা বোন ফোঁটা দেবে না। তাতো হতে পারে না। করোনার পথে কাঁটা দিয়েই ভাই দাদার সুস্থতা কামনায় দিদি বোনেরা তালা সাজাবে। এই রীতির কোনও অদলবদল হতে পারে না।  “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা/যমুনা দেন যমকে ফোঁটা/ আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা/যম যেমন হন চিরজীবী/ আমার ভাই যেন হয় তেমন চিরজীবী।” এটিই ভাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটার প্রচলিত মন্ত্র| আসলে ভাই বা দাদার শ্রীবৃদ্ধি, সুখ, শান্তি কামনার্থেই বোনেরা এই দিনে তিথি মেনে নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে ভাইফোঁটা দিয়ে থাকে।

ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন প্রচলিত মন্ত্রটি তিন বার বলতে হয়। বোনেরা  প্রথমে বাঁ হাতের কড়ে আঙ্গুলের দ্বারা ভাইয়ের কপালে টিকা দেয়। পরে দুই কানের লতিতে দুটো টিকা দেয় ও শেষে কন্ঠনালিতে একটি টিকা দেয়। কপালে চন্দনের তিলক দিলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে, ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি পায়, মন শান্ত থাকে এবং একাগ্রতা বাড়ে, হাজার হাজার বছর আগে আমাদের মুনি ঋষিরা চন্দনের এই গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তারা কপালে চন্দনের তিলক দেওয়ার বিধি প্রবর্তন করেন। চন্দনের এই গুণের জন্য ঈশ্বরের প্রতি সর্বদা মন নিবিষ্ট রাখতে পারা যায়। এ কারণেই যেকোনও মন্দির বা কোথাও হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে, উপস্থিত ভক্তদের কপালে চন্দনের তিলক দিয়ে দেওয়া হয়। চন্দনের মতো এই একই গুণ রয়েছে দইয়েরও। এই কারণেই ভাইফোঁটায় দই ও চন্দনের ফোঁটা দেওয়া হয়। সাধারণত ভাইরা বোনেদের কাছে এসে চন্দন চর্চিত ফোঁটা নেয়। বোন ছোট হলে দাদা আর্শীবাদ করে থাকে। সেই সঙ্গে দাদার পক্ষ থেকে বোনদের জন্য বিশেষ কোনও উপহার তো থাকেই। বোন বড় হলে আদরের ভাইকে ফোঁটার সঙ্গে উপহারও দেওয়া হয়।

বলা বাহুল্য, ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের কোনও ধর্মীয় মন্ত্র নেই। সাধারণত প্রদীপ জ্বালিয়ে, উলুধ্বনি দিয়ে মাঙ্গলিক পরিবেশে অনুষ্ঠানটি হয়ে থাকে।আমাদের কপাল চেতনার প্রথম স্তর, তাই কপালে টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। সাংসারিক ভাবনায় কপাল হচ্ছে ভাগ্যের স্থান। তাই বোনেরা ভাইয়ের সৌভাগ্য কামনায় এটি করে থাকে। কানের লতিতে দেওয়ার কারণ হল, কান হল শ্রবণ অঙ্গ। আর জগৎ ধ্বনিময়। সেই ধ্বনিতেই ব্রহ্মের পদধ্বনি অনুচ্চারিত হচ্ছে। ভাইয়ের কর্ণে যেন সেই ব্রহ্মধ্বনি শ্রুত হয়। যেহেতু কণ্ঠ থেকে বাক্যের প্রকাশ, তাই বোনেরা কণ্ঠে টিকা দিয়ে থাকে। যাতে ভাইয়ের বাক্য মধুর হয়।