‘হেরা’ অর্থ দেখা এবং ‘পঞ্চমী’ অর্থ পঞ্চম দিন। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, রথযাত্রার শুরুর পঞ্চম দিনে ভগবান জগন্নাথের সন্ধানে তাঁর মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুন্ডিচা মন্দিরে গিয়েছিলেন দেবী লক্ষ্মী, এই দিনে পালন করা হয় হেরা পঞ্চমী উৎসব। পুরী রথযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এটি। তাই প্রতি বছর আষাঢ় শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিনে গুন্ডিচা মন্দিরে পালন করা হয় হেরা পঞ্চমী। ২০২৪ সালে ১১ জুলাই গুন্ডিচা মন্দিরে পালন করা হবে হেরা পঞ্চমীর উৎসব।
হেরা পঞ্চমীর দিন গুন্ডিচা মন্দিরে নিয়ম মেনে সাজানো হয় মহালক্ষ্মীর মূর্তি। এরপর গর্ভগৃহের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত বটগাছের নিচে রাখা পালকিতে স্থাপন করা হয় মহালক্ষ্মীর মূর্তি। পালকি সেবকরা পালকি বহন করে নিয়ে যায় গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ রথের কাছে এবং সেখানে উপস্থিত হাজার হাজার ভক্তরা দেবী মহালক্ষ্মীর স্তব করেন। পুরো পথ জুড়ে বাজে ঢোল, ঘণ্টা এবং শঙ্খের ধ্বনির সঙ্গে পরিবেশন করা হয় কীর্তন-ভজন। মন্দিরে পৌঁছানোর পর পুরোহিত ভগবান জগন্নাথের মূর্তি থেকে একটি মালা নিয়ে পরিয়ে দেন দেবী লক্ষ্মীকে।
আষাঢ় শুক্লপক্ষ দ্বিতীয়ার দিনে ভগবান জগন্নাথ, বোন সুভদ্রা এবং ভাই বলভদ্রের সঙ্গে নিজ নিজ রথে চড়ে মাসির সঙ্গে দেখা করার জন্য রওনা হন গুন্ডিচা মন্দিরে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান জগন্নাথ তাঁর স্ত্রী তথা দেবী লক্ষ্মীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি তাঁর মাসির সঙ্গে দেখা করে পরের দিন ফিরে আসবেন, কিন্তু ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও ভগবান জগন্নাথের দেখা পান না দেবী লক্ষ্মী। তিনি চিন্তিত হয়ে পঞ্চম দিনে পালকিতে চড়ে গুন্ডিচা মন্দিরে পৌঁছান। গুন্ডিচা মন্দিরের বাইরে দাঁড়িয়ে ভগবান জগন্নাথের রথের দেখতে পান তিনি। এরপর গুন্ডিচা মন্দিরের ভিতরে গিয়ে ভগবান জগন্নাথকে ফিরে আসার প্রার্থনা করেন দেবী মহালক্ষ্মী। কিন্তু জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার সময় মাতা লক্ষ্মী দেখতে পান না ভগবান জগন্নাথকে, তাই তিনি রেগে গিয়ে এক ভৃত্যকে জগন্নাথদেবের রথ ভাঙার আদেশ দেন। একটি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে রথ ভাঙার দৃশ্য দেখে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে যান দেবী মহালক্ষ্মী।