ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ও সম্প্রদায় তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী পালন করে নববর্ষ। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদে শুরু হয় গুজরাটিদের নতুন বছর। সাধারণত অন্নকূট পুজোর দিনে পালন করা হয় এই দিনটি, যা গোবর্ধন পুজো নামেও পরিচিত। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে, ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর শনিবার গুজরাটি সমাজের মানুষ পালন করে নববর্ষ। গুজরাটিদের অধিকাংশ মানুষই কোনও না কোনও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এবং নববর্ষ উপলক্ষে তারা পুরানো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে একটি নতুন অ্যাকাউন্ট শুরু করে এই দিন। অনেক গুজরাটি এই দিনটিকে চোপড়া-পূজন বলে সম্বোধন করে।

গুজরাটি নববর্ষের দিন দেবী লক্ষ্মীর পুজো করে এবং আগামী বছরে তাদের ব্যবসার সমৃদ্ধির জন্য দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করে গুজরাটিরা। তাই চোপড়া পুজোর সময় তারা নতুন হিসেব খাতায় স্বস্তিক প্রতীক তৈরি করে। ২০২৪ সালের কার্তিক শুক্ল পক্ষের প্রতিপদ শুরু হবে ০১ নভেম্বর, শুক্রবার, সন্ধ্যা ০৬:১৬ মিনিটে এবং শেষ হবে ০২ নভেম্বর, শনিবার, রাত ০৮:২১ মিনিটে। উদয় তিথি অনুসারে, গুজরাটি নববর্ষ পালন করা হবে ২ নভেম্বর। গুজরাটি নববর্ষের দিন বর্তমানে চলমান বিক্রম সংবত ২০৮০ শেষ হবে এবং শুরু হবে বিক্রম সংবত ২০৮১।

গুজরাটে ঐতিহ্যবাহী হিসেব খাতাকে বলা হয় 'চোপড়া'। পুরানো চোপড়ার সমাপ্তি এবং নতুন চোপড়ার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় গুজরাটি নববর্ষ। দীপাবলি পুজোর সময়, দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য খোলা হয় একটি নতুন চোপড়া। শুরুতে হিসেব খাতার প্রথম পাতায় স্বস্তিকা প্রতীক তৈরি করা হয়। এরপর খাতায় রোলি, হলুদ, ফুল নিবেদন করে পুজো করা হয় দেবী লক্ষ্মীর পুজো। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে গোকুলবাসীদের দ্বারা প্রস্তুত নৈবেদ্য এবং প্রার্থনা দেখে ভগবান কৃষ্ণ তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যে তাদের আসল 'ধর্ম' হল কৃষিকাজ এবং গবাদি পশু রক্ষা করা। এর জন্য কোনও দেবতার কাছে প্রার্থনা না করে, প্রাকৃতিক ঘটনার অপেক্ষা না করে আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত।

কৃষ্ণের যুক্তিকে যুক্তিযুক্ত মনে করেন গোকুলের বাসিন্দারা। কৃষ্ণের কথায় তারা ইন্দ্রদেবের পুজো বন্ধ করে গোবর্ধন পর্বত ও গরুর পুজো শুরু করেন, যা দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে গোকুলের উপর প্রবল বর্ষণ শুরু করেন ইন্দ্রদেব। কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় গোকুলে। এমন পরিস্থিতি দেখে কৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে ধরেন এবং গোকুলের মানুষ, শস্য ও গবাদি পশুদের আশ্রয় ও সুরক্ষা প্রদান করেন। এরপর ইন্দ্রদেব বুঝতে পারেন যে কৃষ্ণ সাধারণ ব্যক্তি নন, প্রকৃত পরমেশ্বর। সেই থেকে এই দিনটিকে নববর্ষ হিসেবে পালন করে গুজরাটি সমাজ।