Photo Credit_Twitter

বৃষ্টির ভ্রুকুটিকে পাশে সরিয়ে দুর্গাপুজো(Durga Puja) চলছে পুরোদমে। মাঝে মাঝে বৃষ্টিরূপী অসুর  বাগড়া দেওয়ার চেষ্টা করলেও বাঙালির উত্‍সাহ উদ্দীপনায় জল ঢালতে মোটেও পারছে না। আজ ৩ অক্টোবর ২০২২ সোমবার পালিত হচ্ছে এই বছরের দুর্গাপুজোর মহাষ্টমী। দুর্গাপুজোয় এদিনই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

সন্ধি পূজা কী ?

শুক্লাষ্টমীর বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষণে দেবী দুর্গার সন্ধিপুজো হয়।দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সন্ধিপূজা । অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরুর ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ । এই সন্ধিক্ষণে তন্ত্রমতে করা হয় ‘সন্ধিপূজা ’।

সন্ধি পূজা কেন করা হয় ?

সন্ধিপূজা আসলে অসুরনাশিনী দেবী দুর্গার আর এক অসুরদলনী রূপের পূজা । সেই দেবীর নাম 'চামুণ্ডা' । অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন । তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয় ।সন্ধিপূজার সময় মায়ের পায়ে নিবেদিত হয় ১০৮ লাল পদ্ম । এই ১০৮ টি পদ্মের পিছনেও আছে দু'টি পৌরাণিক কাহিনি ।

বলা হয়, অসুর নিধনকালে দেবী দুর্গার সারা অঙ্গ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৮টি ক্ষত । ক্ষতগুলির অসহনীয় জ্বালা জুড়োবার জন্য দেবাদিদেব মহাদেব মা দুর্গাকে দেবীদহে স্নান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ।দেবীদহে স্নান করার পর মায়ের শরীরের সেই ১০৭টি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৭টি পদ্ম । কিন্তু একটি ক্ষত তখনও অবশিষ্ট ছিল । দেবী দুর্গাকে ১০৮ তম ক্ষতের জ্বালায় কষ্ট পেতে দেখে মহাদেবের চোখ থেকে নির্গত হয়েছিল এক ফোঁটা অশ্রু । অশ্রুকণাটি গিয়ে পড়েছিল মায়ের ১০৮ তম ক্ষতে । মিলিয়ে গিয়েছিল মায়ের শরীরের অবশিষ্ট ক্ষতটিও । দেবীদহে থেকে গিয়েছিল ১০৭ টি পদ্ম ।

ত্রেতা যুগে লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করার জন্য সন্ধিপূজার শেষে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পায়ে ১০৮টি পদ্ম উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন । তাই ভক্ত হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন দেবীদহে । কিন্তু দেবীদহ থেকে ১০৭ টি পদ্ম নিয়ে ফিরেছিলেন পবনপুত্র । কারণ দেবীদহে আর পদ্ম ছিল না । সুতরাং মায়ের পায়ে দেওয়ার জন্য একটি পদ্ম কম পড়েছিল । সন্ধিক্ষণ চলে যাওয়ার উপক্রম হলে শ্রীরামচন্দ্র ধনুর্বাণ দিয়ে নিজের নীল পদ্মের ন্যায় চক্ষু দুটির মধ্যে একটি উৎপাটন করে মায়ের পায়ে অর্পণ করতে চেয়েছিলেন ১০৮ তম পদ্ম হিসেবে ।কৃত্তিবাসের রামায়নে পাওয়া যায়, রাবণ নিধন যজ্ঞের প্রাক্কালে রামচন্দ্র বলছেন

"যুগল নয়ন মোর ফুল্ল নীলোত্পল সংকল্প করিব পূর্ণ বুঝিয়ে সকল। একচক্ষু দিব আমি দেবীর চরণে "

রাম ধনুর্বাণ নিয়ে যখন নিজের নীল পদ্মের মতো একটি চোখ উত্পাটন করতে উদ্যত হন তখন দেবী রামচন্দ্রের হাত ধরে তাঁকে নিবৃত্ত করে বলেন

"অকালবোধনে পূজা কৈলে তুমি/  দশভুজা বিধিমতে করিলা বিন্যাস।লোকে জানাবার জন্য আমারে /করিতে ধন্য অবনীতে করিলে প্রকাশ ।। রাবণে ছাড়িনু আমি, বিনাশ করহ তুমি/ এত বলি হৈলা অন্তর্ধান"

সন্ধি পূজার জন্য কোন ধরনের উপকরণ প্রয়োজন ?

সন্ধিপূজায় ১০৮টি পদ্মই মায়ের পায়ে নিবেদন করা হয় । মায়ের সামনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মাটির তৈরি ১০৮ টি প্রদীপ । সন্ধিপূজায় অনান্য উপকরণ হিসেবে লাগে স্বর্ণাঙ্গুরীয়ক (একটি), লোহা ও নথ (একটি), চেলির শাড়ি (একটি), শাড়ি (একটি), মধুপর্কের কাঁসার বাটি (একটি), থালা (একটি), ঘড়া (একটি), দধি, চিনি, মধু, ঘৃত, বালিশ (একটি), মাদুর (একটি), চাঁদমালা(একটি), ভোগ ও আরতির উপকরণ । নৈবেদ্যর মধ্যে প্রধান নৈবেদ্য হিসাবে লাল ফল এবং পুষ্পাদির মধ্যে জবাফুল থাকতেই হবে ।