Diwali Special: আসছে দীপাবলি। গোটা দেশ জুড়ে চলবে শক্তির আরাধনা। দীপাবলিতে আলোর উৎসবের সঙ্গে সাযুজ্য রয়েছে শক্তি আরাধনার। যে সময়ে ধনলক্ষ্মীর পুজো যেমন হয়, তেমনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আদ্যাশক্তি মহাময়ার পুজো হয়। তবে স্থান ভেদে মহামায়ার সেই রূপ বদলে যায়।
দীপাবলিতে কোথাও তিনি কালী রূপে পূজিত হন আবার কোথাও মা তারা রূপে আবার কোথাও বড় মা হিসেবে পূজিত হন তিনি। আবার কোথাও আম্বা মা রূপে তাঁর পুজো করেন সন্তানরা।
দীপাবলিতে সেই শক্তি আরাধনার সময়ে আজ বলব কর্ণাটকের হাসানাবা মন্দিরের গল্প। যে হাসানাবা মন্দিরে আদ্যাশক্তি মাহামায়াকে আম্বা বা আম্বে মা হিসেবে পুজো করা হয়।
কর্ণাটকের হাসান জেলায় রয়েছে এই হাসানাবা মন্দির (Hasanamba Temple)। যেখানে শক্তিরুপিনী মহামায়াকে আম্বা মা হিসেবে পুজো করা হয়। তবে যে রূপেই মা পূজিত হন না কেন, এই মন্দির মাত্র ২ সপ্তাহ খোলা থাকে। যা তার অলৌকিক রূপকে বর্ণনা করে।
কর্ণাটকের (Karnataka) এই হাসানাবা মন্দির খোলা থাকে মাত্র ৯ থেকে ১৫ দিন সময়। দীপাবলির আগে খোলা হয় এই মন্দির। দীপাবলির আগেই পুজোআচ্চা করা হয় মায়ের। এই সময় হাসানাবা মন্দিরে যে ভক্তরা হাজির হন, তাঁরা মায়ের কাছে নিজেদের ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেন। তাও লিখিত রূপে।
এই সময় আম্বা মাকে ঘিয়ে প্রদীপ, ফুল এবং ২ বস্তা চাল দিয়ে পুজো করা হয়। সেই সঙ্গে জলও দেওয়া হয় কলস ভরে। দীপাবলির পরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় এই মন্দির। পুজো সমাপ্ত করে, মন্দির বন্ধ করলেও, পরের বছর দীপাবলির আগে যখন দরজা খোলা হয়, তখন দেখা যায় অলৌকিক কাণ্ড।
আগের বছর দীপাবলিতে জ্বালানো প্রদীপ তখনও জ্বলতে থাকে। মায়ের সামনে যে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে মন্দিরের দরজা বন্ধ করা হয়, তা পরের বছরও থাকে অক্ষত। অর্থাৎ মন্দিরের প্রদীপ জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকে। সেই সঙ্গে আগের বছরের পুজোর ফুলও থাকে একেবারে তরতাজা। যা অত্যাশ্চার্যের চেয়ে কোনও অংশে কম নয় বলে মনে করা হয়।
শুধু তাই নয়, মাকে যে চালের প্রসাদ চড়িয়ে দরজা বন্ধ করা হয় আগের বছর, পরেরবার দীপাবলি পর্যন্ত তা গরম থাকে। আম্বা মায়ের এই অলৌকিক কাণ্ড চোখে পড়ে ভক্তদের। তাইতো হাসানাবা মন্দিরের অলৌকিকস্বরূপ দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত সমাগম হয় এই ১৫ দিনের মধ্যে।
মন্দিরের পৌরাণিক কাহিনী
হাসানাবা মন্দির দেবাদিদেব শিব এবং দেবী পার্বতীর বিভিন্ন রূপের সাথে সম্পর্কিত। কথিত রয়েছে, এক সময় দানব অন্ধকাসুর অদৃশ্যতার শক্তিশালী বর পেয়েছিল। ভগবান ব্রক্ষ্মার জন্য কঠোর তপস্যা করেই অন্ধকাসুর ওই বর পায়। অন্ধকাসুরের ওই অদৃশ্যতার কারণে, সে মানুষের সর্বনাশ শুরু করে। ধ্বংসের খেলায় মেতে ওঠে।
অন্ধকাসুর ওই সময় বিভিন্ন মুনি, ঋষিদের নিশানা করে। তাঁদের হত্যার খেলায় মেতে ওঠে। ঈশ্বরকে যাঁরা নিয়মিত পুজো করেন, সেই সমস্ত মুনি, ঋষিদের গুনে গুনে মারতে শুরু করে ওই দানব। অন্ধকাসুর নামের ওই দানবকে শেষ করতে, দেবাদিদেব তাঁর শক্তি দিয়ে যোগেশ্বরীকে ডেকে পাঠান। ওই যোগেশ্বরীই এরপর ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে অন্ধকাসুরকে খতম করে।
দেবাদিদেব যে যোগেশ্বরীকে ডেকে আনেন ভয়ানক দৈত্যকে শেষ করতে, সেই দেবীর একাধিক রূপ ছিল। বারাহী, ইন্দ্রাণী, চামুন্ডি, ব্রাক্ষ্মী, মহেশ্বরী, কৌমারী এবং বৈষ্ণবী, এই রূপগুলি অন্ধকাসুরের সঙ্গে লড়ে, তাকে খতম করে।
মনে করা হয়, অন্ধকাসুরকে শেষ করতে যোগেশ্বরী যখন মর্তে নামেন, সেই সময় তাঁর বাসস্থান হিসেবে হাসানাবা মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর সেই কারণেই দীপাবলির সময় শক্তি পুজোর পর এক বছর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় এই মন্দির।