হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল ছট পুজো। বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পূর্ব উত্তর প্রদেশের মতো ভারতের একটি বড় অংশে খুব আড়ম্বর সহকারে পালন করা হয় এই উৎসবটি। বর্তমান যুগে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ ব্যাপকভাবে পালন করে ছট উৎসব। পঞ্জিকা অনুসারে, কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে পালন করা হয় ছট উৎসব। ৪ দিন ধরে চলে এই উৎসব। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার শুরু হবে ছট উৎসব। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, সত্যযুগ ও দ্বাপর যুগে সূচনা হয়েছে ছট উৎসবের। কথিত আছে যে মাতা সীতা এবং ভগবান শ্রী রামও ছট উপবাস পালন করে সূর্যের পুজো করেছিলেন। দ্বাপর যুগে কর্ণ ও পাণ্ডবদের স্ত্রী দ্রৌপদীও সূর্যের পুজো করেছিলেন।

সূর্য দেব এবং দেবী ষষ্ঠীর পুজো করা হয় ছট উৎসবে। প্রকৃতি, বাতাস, জল ইত্যাদির সঙ্গেও জড়িত এই উৎসব। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, রাজা প্রিয়ভান্দের সঙ্গে সম্পর্কিত ছট উপবাস। রাজা প্রিয়ভান্দ তার পুত্রের জীবন বাঁচাতে ছট উপবাস পালন করার সময় সূর্য দেবতা এবং ষষ্ঠী মাতার পুজো করেছিলেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, রাবণকে হত্যা এবং ১৪ বছরের বনবাসের পর রাবণ হত্যার পাপ নিয়ে অযোধ্যায় ফিরে আসেন শ্রী রাম। এই পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য, ঋষিদের আদেশে রাজসূয় যজ্ঞ করা হয়। যজ্ঞের জন্য ভগবান রাম ও মাতা সীতাকে আশ্রমে ডেকে মাতা সীতাকে কার্তিক শুক্লার ষষ্ঠী তিথিতে উপবাস করে সূর্যদেবের পুজোর উপদেশ দেন মুগদল ঋষি। ৬ দিন মুগদল ঋষির আশ্রমে থেকে সূর্য দেবের পুজো করেছিলেন ভগবান রাম ও মাতা সীতা।

রামায়ণের পাশাপাশি মহাভারতের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে ছট উৎসবের ইতিহাস। পাণ্ডবরা যখন জুয়ায় সমগ্র রাজ্য হারিয়ে ছিলেন তখন ছট উপবাস পালন করে ছিলেন দ্রৌপদী। উপবাসের প্রভাবে এবং সূর্য দেবতার কৃপায় পাণ্ডবরা তাদের হারানো রাজ্য ফিরে পান। মহাভারতের আরেকটি গল্প অনুসারে, ভগবান সূর্যের একজন মহান ভক্ত ছিলেন কর্ণ। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সময় তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা জলে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবকে জল নিবেদন করতেন। মান্যতা রয়েছে যে কর্ণের হাত দিয়ে শুরু হয়েছে সূর্য দেবতার পুজো এবং সূর্য দেবতার আশীর্বাদেই একজন মহান যোদ্ধা হয়েছিলেন কর্ণ।