‘ভাইফোঁটা’, ‘ভাইদুজ’, ‘ভাইটিকা’, ‘ভাইদুতিয়া’—যে নামেই ডাকি না কেন, পবিত্র ভাই-বোনের পবিত্র বন্ধনের প্রতীক এই সম্পর্ক। গোটা ভারতবর্ষ জুড়েই তা পালিত হয়। এমনকী প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালেও তা পালন করা হয়। কিন্তু কীভাবে শুরু হল এই উৎসবের? এই ।
ভাইফোঁটার সর্বাধিক প্রচলিত কাহিনী যম ও যমুনার গল্প। এই উপাখ্যানটি ভাইফোঁটার সাথে সবচেয়ে বেশি জড়িত। সূর্যদেবের যমজ সন্তান ছিলেন ধর্মরাজ যম (যমরাজ, মৃত্যুর দেবতা) এবং তাঁর বোন যমুনা (নদী দেবী)। বিমাতার অত্যাচারে সেই সন্তান যমুনা ও যমের ছেলেবেলায় বিচ্ছেদ ঘটে। একসময় যম তাঁর কর্মব্যস্ততার কারণে দীর্ঘকাল ধরে বোনের সঙ্গে দেখা করতে যাননি। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনা তার ভাই যমকে সাদরে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। আচার: বোনের আমন্ত্রণে যমরাজ তাঁর বাড়িতে আসেন। যমুনা অত্যন্ত আনন্দের সাথে ভাইকে বরণ করেন, তাঁর কপালে ফোঁটা দেন (তিলক লাগান) এবং নানা সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেন। বোনের আতিথেয়তা ও ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে যমরাজ যমুনাকে বর চাইতে বলেন। যমুনা তখন এই বর চান যে, এই দিনে যে বোন তার ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেবে এবং ভোজন করাবে, তার ভাইয়ের যেন অকাল মৃত্যুর ভয় না থাকে এবং সে যেন দীর্ঘায়ু লাভ করে। যমরাজ সেই বর মঞ্জুর করেন এবং এই তিথিটিকে 'যম দ্বিতীয়া' নামে পরিচিত করেন। এই ঘটনা থেকেই প্রতি বছর এই দিনে ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া উৎসব পালিত হয়ে আসছে। বাঙালিরা ফোঁটা দেওয়ার সময় এই ছড়াটি বলে:
"ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা।"
২।বিষ্ণু ও লক্ষ্মীর কাহিনী: কোনো কোনো পুরাণে বলা হয়েছে বিষ্ণু নিজের শিষ্য বালিকে বর দিতে গিয়ে নিজেই তাঁর কাছে একবার বন্দি হয়ে পড়লেন। এদিকে নারায়ণ ছাড়া গোটা ব্রহ্মাণ্ড অচল। দুঃখিনী হয়ে উঠলেন স্বয়ং লক্ষ্মীও। তাই, নারায়ণকে উদ্ধার করতে বালিকে ভাই পাতালেন লক্ষ্মী। তাঁকে ফোঁটা দিলেন কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়াতে। আর উপহার হিসেবে ভাইয়ের কাছে ফেরত চাইলেন স্বামী নারায়ণকে। সেই থেকে পালিত হয়ে আসছে ভাইফোঁটা।
৩। শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার কাহিনীঃ ভাইফোঁটার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কৃষ্ণ-সুভদ্রার আখ্যানও। শাস্ত্র মতে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেছিলেন কৃষ্ণ। এরপর তিনি দ্বারকায় ফিরে এলে তাঁর কপালে বিজয় তিলক এঁকে দিয়ে মিষ্টি খেতে দেন সুভদ্রা। সেই থেকেই ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা হয়।