ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য মহান বিপ্লবী বীরদের মধ্যে একটি বিশেষ নাম হল সর্দার ভগত সিং। ভগৎ সিং তাঁর যৌবনে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন, তাঁর সাহসিকতা, দেশপ্রেম এবং শহীদের চেতনা লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। ১৯০৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের (বর্তমানে পাকিস্তানে) লায়ালপুরের বাঙ্গা নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ভগৎ সিং। ২০২৪ সালে এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে দেশ। ভগৎ সিং তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক পটভূমি দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর পিতা এবং কাকা স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন, যার কারণে ছোটবেলা থেকেই তাঁর মধ্যে তৈরি হয়েছিল জাতীয়তাবোধ।
সমসাময়িক অনেকের বিপরীতে গিয়ে মার্কসবাদী মতাদর্শ গ্রহণ করেছিলেন ভগৎ সিং। লেনিন এবং ম্যাজিনি সহ বিশ্বের বিপ্লবীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি। ভগৎ সিং বিশ্বাস করতেন যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সহিংস বিদ্রোহের প্রয়োজন। তিনি হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনে (HRSA) যোগ দেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী কাজ করেছেন তিনি। যুবসমাজকে সংগঠিত করার জন্য 'নৌজওয়ান ভারত সভা' প্রতিষ্ঠা করেন ভগৎ সিং। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল সঙ্গী বটুকেশ্বর দত্তের সঙ্গে দিল্লির বিধানসভায় বোমা নিক্ষেপ করে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভগৎ সিং। এই বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে ভগৎ সিং বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে ভারতীয় যুবকরা।
কারাবাসের সময় রাজনৈতিক বন্দীদের উন্নত চিকিৎসার দাবিতে অনশন করেছিলেন ভগৎ সিং। ভারতীয় বন্দীদের দুর্দশার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং ব্যাপক জনসমর্থন পান তিনি। গ্রেফতারের পর ভগৎ সিং তাঁর মতামত জানাতে একটি বড় প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পান। তিনি আদালতে তাঁর মতামত পেশ করেন এবং তাঁর নীতিতে অটল থাকেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মার্চ ফাঁসি দেওয়া হয় ভগৎ সিংকে। শেষ মুহূর্তেও নীতির সঙ্গে আপস করেননি তিনি। ভগৎ সিংয়ের সাহস ও নিষ্ঠা বর্তমান যুগের তরুণদেরও অনুপ্রাণিত এবং প্রভাবিত করে। ফাঁসির আগে ব্রিটিশ সরকারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি, যাতে তিনি তাঁর মতামত এবং স্বাধীনতার প্রতি তাঁর উৎসর্গ প্রকাশ করেছিলেন। এই চিঠি আজও অনুপ্রেরণার উৎস।