
রামনবমী—হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক অতি পবিত্র দিন। এটি ভগবান শ্রী রামের জন্মতিথি হিসেবে পালিত হয়, যা চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের নবম দিনে পড়ে। এই দিনটি শুধু ভক্তিভরে পালিত হয় না, বরং কিছু নির্দিষ্ট আচার ও নিয়ম মেনে চলাও একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। রামনবমীর মাহাত্ম্য শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও বিশাল তাৎপর্য বহন করে।
রামনবমীর বিশেষ নিয়মগুলি
১. উপবাস পালনঃ রামনবমীর প্রধান নিয়মগুলির একটি হল উপবাস। অনেক ভক্ত এই দিনটি উপবাস রেখে পালন করেন। কেউ শুধুমাত্র ফলাহার গ্রহণ করেন, কেউ আবার নির্জলা উপবাস পালন করেন। উপবাসের উদ্দেশ্য আত্মসংযম, মনঃসংযোগ এবং ভক্তিভাব জাগ্রত করা।
২. সূর্যোদয়ের আগে স্নান ও পূজাঃ এই দিনে ভোরবেলা উঠে গঙ্গা-জল বা পবিত্র জলে স্নান করে মন, বাক্য ও কর্মে শুদ্ধ হয়ে শ্রী রামের পূজা করা হয়। ঘরে ঘরে রামের মূর্তি বা ছবি রেখে ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে পুজো করা হয়।
৩. রামচরিতমানস বা রামায়ণ পাঠ
এই দিনে রামচরিতমানস বা বাল্মীকি রামায়ণ পাঠ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। অনেক মন্দির বা বাড়িতে দিনভর রামায়ণের অখণ্ড পাঠের আয়োজন করা হয়।
৪. রামনাম সংকীর্তন ও যাত্রা
রামনবমীর আরেকটি বিশেষ অংশ হল ‘রামনাম সংকীর্তন’। ভক্তরা এই দিনে “জয় শ্রী রাম” ধ্বনিতে মুখরিত করেন চারপাশ। অনেক জায়গায় মিছিল, শোভাযাত্রা বা রামযাত্রারও আয়োজন করা হয়।
৫. ব্রহ্মচার্য ও সংযম
এই দিনে ব্রহ্মচার্য পালন করা এক গুরুত্বপূর্ণ আচার। মানসিক এবং শারীরিক সংযম বজায় রেখে ঈশ্বরভক্তিতে মনোনিবেশ করাই এই নিয়মের মূল উদ্দেশ্য।
৬. দান ও সেবা
রামনবমী উপলক্ষে দান-পুণ্য করার রীতি প্রচলিত। দরিদ্র ও অসহায়দের আহার প্রদান, পোশাক বিতরণ ইত্যাদি সামাজিক সেবামূলক কাজ এই দিনে ভগবান রামের আদর্শ অনুসরণ করে পালন করা হয়।
রামনবমী শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি ন্যায়, সত্য এবং ধর্মের বিজয়ের প্রতীক। ভগবান রাম তাঁর জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ন্যায় ও কর্তব্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা যদি অন্তত এই একটি দিনে তাঁর মত আচরণ করার চেষ্টা করি, তাহলে সমাজে শান্তি, সংহতি ও মানবিকতার জয় হবে।