মুম্বই, ২৬ সেপ্টেম্বর: এখানে পূজা (Durga Puja) আছে। পুজো নেই। জন্মশহর (Home Town) থেকে প্রায় ২০০০ কিলোমিটার দূরে এখন আমার বাস। একদিকে পাহাড় আর আরেক দিকে সাগর। কর্মক্ষেত্রের ঠিকানা বদলাতে বদলাতে এখন আমার ঠিকানা মুম্বই (Mumbai)। সাংবাদিকতার চাকরি করতে করতে বর্ধমান (Purba Bardhaman) থেকে কলকাতা (Kolkata); তারপর মুম্বই (Mumbai)। আমার ঠিকানা (Adress) বদল হয়ে চলেছে এভাবেই। বেঁচে থাকার লড়াইয়ের এই জার্নিটা (Journey) এখন আমার পরিচিতদের ভাষায় 'বর্ধমান টু বম্বে (Burdwan To Bombay)।' বাড়ির বাইরে যে আমি এই প্রথম রয়েছি, এমনটা নয়। গত বছর এই সময়টা অর্থাৎ পুজোর সময়টা আমার ঠিকানা ছিল তিলোত্তমা কলকাতা। আর এবছর পুজোর আগেই চাকরি পেয়ে আমাকে চলে আসতে হয়েছে মুম্বই। মায়ানগরী। তবে এই বছর যা প্রথম তা হল, ইচ্ছে থাকলেও এবার পুজোয় আর আমি জন্মশহরের পুজো দেখতে পারব না। ছুঁয়ে দেখতে পারব না। নতুন চাকরি, তাই ছুটি মিলল না! অনুভূতিটা কেমন যেন কোন এক পূর্ণিমা রাতে মশারির ভিতর থেকে ফুটফুটে জ্যোৎস্না দেখার মত। যে রাতে আমার ভীষণ জ্বর।
আরব সাগরের তীরে এই শহরটাতে দুর্গা পূজার জৌলুস আছে, থিমের হিরিক আছে, বলিউদ সেলেবদের (Bollywood Celeb) আনাগোনা আছে। কিন্তু যা নেই তা হল পুজোর গন্ধ। আমার কাছে অন্তত রোদের সেই চেহারা বদল ধরা পড়েনি এদেশে এখনও। আজ অফিসে আসার পথে সেই চোরা ব্যাথাটা আরও যেন কয়েক গুণে বাড়িয়ে দিলেন এক মারাঠি ভদ্রমহিলা। সকাল সাড়ে এগারোটা। অফিসে আসব বলে কোপারখৈরানে (Koperkhairane) স্টেশন থেকে জুইনগরমুখী (Juinagar) পনভেলের (Panvel) ট্রেনে ধরলাম। আমার সঙ্গেই মহিলা কামরায় উঠলেন ওই মারাঠি ভদ্রমহিলা। কোপারখৈরানে থেকে জুইনগর মাত্র একটা স্টেশন। তুরভে (Turvey)। ট্রেনে উঠে থেকেই আমার এক বাঙালি সহকর্মীর সঙ্গে কথপোকথন চলছিল। উনি তা বেশ নজর করছিলেন। আমিও লক্ষ্য করছিলাম ওনার নজর। ১০ মিনিটের যাত্রাপথেই তাই টুকরো আলাপ জমল। এটা সেটা জিজ্ঞাসার পর উনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন - 'আপ লোগো কা পূজা কব হ্যাঁয়?' আমি উত্তর দিলাম। উনি বোঝার ভঙ্গিতে মাথা নাড়লেন। ট্রেন জুইনগর থামল। ভদ্রমহিলা নেমে গেলেন। আমিও ফুট ব্রিজ পেরিয়ে অফিসের অটো ধরলাম। কিন্তু মনের মধ্যে কে যেন ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল 'আপ লোগো কা পূজা কব হ্যাঁয়?' আরও পড়ুন- Durga Puja 2019: গোল প্রিন্টের শাড়ি পরে আর গড়িয়াহাটের মোড়ে নয়, এবার পুজোয় রাখুন এইগুলি; টিপস দিলেন মিতা ধর
ডেস্কে (Desk) বসে এখন আমি কপি (Copy) লিখছি। পরশু মহালয়া (Mahalaya)। তার একটা সপ্তাহ পরেই পুজো। তবু মনে হচ্ছে সেই শিউলি ভেজা ভোর, ঠাকুর দেখার রাত, জমাটি আড্ডার দুপুরগুলো কেউ যেন আমার ঘুমিয়ে থাকার মুহূর্তে লুকিয়ে রেখে পালিয়েছে অজানা প্রাণ ভোমরার কৌটোয়...গুপ্ত কুঠুরিতে। মুম্বইতে বসে পুজো নিয়ে অনেক লেখা লিখেছি এবছর। বিগত বছরগুলোর তুলনায় ঢের বেশি। এই পুজোর লেখা লিখতে লিখতেই যেটুকু পুজোর আমেজ পেয়েছি বলতে পারেন। পুজোয় বাংলার বাইরে থেকেও যে পুজোর কাজ করতে পারব, এটা আমার কাছে ছিল কল্পনাতীত। ঠিক যেন পরে পাওয়া চোদ্দ আনার মত।
কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়েছে শুধুমাত্র আমাদের 'লটেস্টলি' (LatestLY) বাংলার সিইও (CEO) শ্রী রাহুল শ্রীবাস্তবের (MR. Rahul Shrivastava) জন্য। ওনার কথায়, "দুর্গা পূজা কা কাম বরাবর সে হোনা চাহিয়ে।" ওনার নির্দেশ, "চল ভাই, তু পেহলি বার পূজা মে ঘর সে বাহার হ্যাঁয় না! ইয়ে ফিলিং সবকে সাথ শেয়ার করনা চাহিয়ে।"