Jagdeep Dhankhar and PM Narendra Modi.

VP Jagdeep Dhankhar Resigned: চমকাই ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জগদীপ ধনখড়। স্বাস্থ্যজনিত কারণ দেখিয়ে গতকাল, সোমবার রাতে সংসদের বাদল অধিবেশনের প্রথম দিনে উপরাষ্ট্রপতি ধনখড়ের পদত্যাগ নিয়ে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। ধনখড়ের সরে দাঁড়ানো নিয়ে সরকার পক্ষের তরফ থেকে যাই বলা হোক, দেশের বিরোধী দলের নেতারা কিন্তু এই বিষয়ের পিছনে আলাদা কারণ আছে বলে মনে করছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল থেকে ২০২২ সালে দেশের উপরাষ্ট্রপতি হন রাজস্থানের বিশিষ্ট আইনজীবী ধনখড়। সংবিধান অনুযায়ী দেশের উপরাষ্ট্রপতি পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু ধনখড় তিন বছর পরেই সরে দাঁড়ালেন। ধনখড়ের পদত্যাগের পর নানা প্রশ্ন উঠেছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক সেসব প্রশ্নগুলি ও উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক।

১) ঠিক কী কারণে পদত্যাগ করলেন জগদীপ ধনখড়:

ইস্তফা পত্রে জগদীপ ধনখড় সাফ জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্যজনিত কারণে ডাক্তারদের পরামর্শ মেনেই তিনি সরে দাঁড়ালেন। রাজনীতিতে প্রায়ই লেখা তথ্যের পিছনে অনেক কিছু লুকানো থাকে। সেটা অতীতে বারবার দেখা গিয়েছে। তেমনটা ধনখড়ের ইস্তফাতেও হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। সোমবার সন্ধ্য়াতেও যিনি চুটিয়ে সংসদের কাজ করেছেন, সাংসদদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তিনি এভাবে কেন ইস্তফা দিলেন। শরীর খারাপ থাকলে কটা দিন ছুটি নিতে পারতেন, উপরাষ্ট্রপতি পদে আরও দু বছরের মেয়াদ ছিল তাঁর। ধনখড়ের ইস্তফার কারণ নিয়ে যে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে তা অস্বীকার করা যাবে না।

২) পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্তে কে দায়িত্ব সামলাবেন:

ভারতের সংবিধান অনুযায়ী দেশের উপরাষ্ট্রপতির পদ ইস্তফা, অপসারণ বা মৃত্যুর কারণে খালি হলে, পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি সাংবিধানিকভাবে এই পদের দায়িত্ব পালন করেন না। উপরাষ্ট্রপতির প্রধান দায়িত্ব হল রাজ্যসভার সভাপতিত্ব করা। উপরাষ্ট্রপতি অনুপস্থিত থাকলে বা পদ শূন্য থাকলে, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান বা রাজ্যসভার কোনো সদস্য, যিনি সভাপতি প্যানেলের সদস্য, সভাপতিত্ব করেন। রাজ্যসভার বর্তমান ডেপুটি চেয়ারম্যান হলেন হরিবংশ নারায়ণ সিং। এবার তিনি রাজ্যসভা পরিচালন করবেন।

৩) ধনখড়ের পদত্যাগ নিয়ে যেসব জল্পনা চলছে:

ধনখড়ের পদত্যাগ নিয়ে বিরোধী দলগুলির নেতারা যে কথাগুলি বলছেন, সেগুলি মূলত তিনটি- ক) দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আচরণেই প্রবল অসন্তুষ্ট হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্য়াগ করেছেন ধনখড়। গতকাল, সোমবার রাজ্যসভার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠকে জে পি নাড্ডা , কিরেন রিজিজু গরহাজিরিটা মেনে নিতে পারেননি রাজসভার চেয়ারম্যান। খ) গত কয়েক দিন বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় ধনখড় নাকি সরকারের কাজ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। গ) আরএসএ প্রধান মোহন ভগবতের ৭৫ বছর বয়সের পর পদত্যাগের বিষয়টি রয়েছে ৭৪ বছরের ধনখড়ের সরে দাঁড়ানোর পিছনে।

৪) উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন কত দিনের মধ্যে করতে হবে

এমনিতে সাংসদ, বিধায়কদের পদ খালি হলে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন করাতে হয়। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংবিধানে তেমন কোনও ডেডলাইন নেই। তবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন করানোর কথা বলা হয়েছে। তবে সেটা কত দ্রুত তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ নেই।

৫) সরকার ও বিরোধীদের প্রার্থী কে হতে পারেন:

এখনও এই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও আভাস নেই। তবে শোনা যাচ্ছে কোনও রাজ্যপাল বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এনডিএ-র প্রার্থী হিসেবে উপরাষ্ট্রপতি দাঁড়াবেন। সোশ্য়াল মিডিয়ায় উপরাষ্ট্রপতি পদে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতীন গডকরি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং, কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংয়ের নাম উঠছে। ঠিক যেমন ২০১৭ সালে সংসদীয় বিষয়ক, তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে উপরাষ্ট্রপতি হন। তবে নীতীশ, নীতীন কিংবা রাজনাথ সিংয়ের উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। কারণ এই তিনজনই সক্রিয় রাজনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করতে চান। বিরোধী দলের উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী এখনও ঠিক হয়নি। শরদ পাওয়ারের নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে পাওয়ার সম্ভবত উপরাষ্ট্রপতি পদে ভোটে দাঁড়াতে রাজি হবেন না। পরবর্তী উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা, কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের নামও সোশ্যাল মিডিয়ার একতরফা জল্পনার মাঝে উঠেছে।

৬) জয়ের সম্ভাবনা কাদের বেশি:

লোকসভায় বিজেপির সাংসদ সংখ্য়া এক ধাক্কায় অনেকটা কমলেও উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে জিততে মোদী সরকারের প্রার্থীর জিততে অসুবিধা হবে না। উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন শুধু সংসদের দুই কক্ষের সাংসদরা। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মত বিধায়করা ভোট দিতে পারেন না। উপরাষ্ট্রপতি ভোটে জিততে প্রয়োজন হয় ৩৯৫ জন সাংসদের। সেখানে বিজেপির আছে মোট ৩৪১ জন সাংসদ। এনডিএর সব দল মিলিয়ে সংখ্যাটা ৪২৬ জন।

৭) নতুন উপরাষ্ট্রপতি কত সাল অবধি ক্ষমতায় থাকবেন:

জগদীপ ধনখড়ের আরও দু বছরের মেয়াদ ছিল। কিন্তু তাঁর পরিবর্তে যিনি ক্ষমতায় আসবেন, তিনি পুরো পাঁচ বছর দায়িত্বভার পালন করবেন।