Lunar Eclipse (Photo Credit: Wikimedia Commons)

Chandra Grahan 2025: পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ, রবিবার ভারতীয় সময় রাত ৯টা ৫৮ মিনিট থেকে আগামিকাল, রবিবার রাত ১.২৬ মিনিট পর্যন্ত চলবে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ। পুরো ৮২ মিনিটের জন্য চাঁদ এখন পুরো লাল হয়ে যাবে। পরিভাষায় যাকে বলে ব্লাড মুন (Blood Moon)। গ্রহণ নিয়ে আমাদের সমাজে কুসংস্কার কম নেই।

বিশ্বের ৮৫ শতাংশ মানুষ এই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখার সুযোগ পাবে। অনেকেই এই গ্রহমের সময় কিছুই খান না। কারণ গ্রহণের ফলে নাকি খাবারে জীবাণু বাড়ে। কিন্তু এইসব কুসংস্কারের বাইরে চন্দ্রগ্রহণে ঠিক কী ঘটে? পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ এক বিস্ময়কর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দৃশ্য, যা আকাশপ্রেমীদের কল্পনা ছুঁয়ে যায়। সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী চলে এলে পৃথিবীর ছায়া পড়ে চাঁদের গায়ে। সেই সময়ে ঘটে যায় একের পর এক অনন্য ঘটনা।

ব্রিটেনের আকাশে চন্দ্রগ্রহণ

দেখে নিন পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণের সময় ঘটে যাওয়া ১০টি বিস্ময়কর ঘটনা:

১) চাঁদ প্রবেশ করে পৃথিবীর আংশিক ছায়া বা অর্ধছায়া (Penumbra)

গ্রহণের শুরু হয় যখন চাঁদ পৃথিবীর বাইরের হালকা ছায়া বা পেনাম্ব্রায় প্রবেশ করে। এতে চাঁদের গায়ে হালকা অন্ধকার পড়ে, যদিও খালি চোখে তা প্রায় বোঝা যায় না।

আফ্রিকায় ব্লাড মুন, নাসার ক্যামেরায়

২) আংশিক গ্রহণের সূচনা

চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবীর গভীর ছায়া বা আম্ব্রায় ঢুকতে থাকে। চাঁদের এক পাশে বাঁকা অন্ধকার দেখা যায়, যা ক্রমশ বড় হতে থাকে। এটাই আংশিক গ্রহণের শুরু।

কেন হয় চন্দ্রগ্রহণ

৩) রক্তিম চাঁদ বা 'ব্লাড মুন'

পূর্ণগ্রাসের সময় চাঁদ পুরোপুরি আম্ব্রার ভেতরে ঢুকে পড়ে। তখন চাঁদ লালচে আভা ধারণ করে, যাকে বলা হয় ‘ব্লাড মুন’। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সূর্যের আলো ছেঁকে লাল রশ্মি চাঁদের গায়ে ফেলে, তাই এই দৃশ্য তৈরি হয়।

৪) আকাশ আরও অন্ধকার হয়, দেখা যায় তারা

চাঁদ ফিকে হয়ে আসতেই রাতের আকাশ আরও অন্ধকার দেখায়। তখন স্পষ্টভাবে দেখা যায় তারারা ও নক্ষত্রমণ্ডল। এতে গ্রহণের সৌন্দর্য বহুগুণ বেড়ে যায়।

৫) বায়ুমণ্ডলের প্রভাব চাঁদের রঙে প্রভাব

চাঁদের রঙ সবসময় একরকম হয় না। কখনও গাঢ় লাল, কখনও কমলা, আবার কখনও ধূসর রঙে দেখা যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মেঘ, আগ্নেয়গিরির ছাই বা দূষণের ওপর নির্ভর করে এই রঙ পরিবর্তিত হয়।

৬) চাঁদের তাপমাত্রা হঠাৎ নেমে যায়

গ্রহণ চলাকালীন সূর্যের সরাসরি আলো না পেয়ে চাঁদের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা হঠাৎ কয়েকশো ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। কারণ চাঁদের নিজের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই, যা তাপ ধরে রাখতে পারে।

৭) নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে ঘটে গ্রহণ

পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে। পেনাম্ব্রাল, আংশিক এবং পূর্ণগ্রাস ধাপে ধাপে ঘটে। পূর্ণগ্রাসের সময়সীমা অনেক সময় প্রায় ৭২ মিনিট পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে।

৮) সংস্কৃতি ও ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য

প্রাচীন যুগ থেকে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে নানা কাহিনি, আচার ও বিশ্বাস প্রচলিত। কোথাও একে অশুভ মনে করা হতো, আবার কোথাও উৎসবের মতো উদযাপন করা হয়েছে। আজও এর প্রতি মানুষের কৌতূহল অটুট।

৯) দেখার জন্য বিশেষ যন্ত্রের দরকার নেই

সূর্যগ্রহণের মতো চোখ রক্ষার ঝুঁকি এখানে নেই। খালি চোখে, দূরবীন বা টেলিস্কোপ দিয়ে যে কেউ নিরাপদে উপভোগ করতে পারেন এই দৃশ্য।

১০) সারা পৃথিবীতে দৃশ্যমান হলেও ভিন্নতা থাকে

যে অঞ্চলে রাত থাকে, আকাশে চাঁদ থাকে। সেখান থেকেই পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়। তবে ভৌগোলিক অবস্থান ও সময়ের ওপর নির্ভর করে কোথাও পুরোটা, কোথাও আংশিকভাবে দেখা যায় এই ঘটনা।