পুণে, ৩ জুলাই: দীর্ঘ ১৩ বছর দেশের ফুটবলের মসনদে থাকা প্রফুল প্য়াটেল (Praful Patel)-কে আত্মঘাতী গোলের দায়ে দলের মাঠ থেকে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দিলেন এনসিপি সভাপতি শরদ পাওয়ার। দলের কার্যকরী সভাপতি তথা নিজের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলের চিঠির পর এনসিপি-র বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিলেন শরদ পাওয়ার। তবে দলীয় বিদ্রোহের মূল স্তম্ভকে এখনও কোনও সাজা দিলেন না শরদ পাওয়ার। সুপ্রিয়া সুলের প্রস্তাব মেনে দলবিরোধী কাজের দায়ে এনসিপি-র কার্যকরী সভাপতি প্রফুল প্যাটেল ও সাংসদ সুনীল টাটকারের দলের সদস্য পদ খারিজ করলেন শরদ পাওয়ার। পাশাপাশি প্রফুল প্যাটেলের রাজ্যসভার সাংসদ পদ খারিজের দাবিও তুলল এনসিপি।
১৯৯৯ সালে এনসিপি গঠনের শুরু থেকেই শরদ পাওয়ারের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন প্রফুল প্যাটেল। শরদ পাওয়ারের হাত ধরেই তিনি রাজনীতি এসেছিলেন। ১৯৯১ সালে লোকসভা ভোটে জিতে প্রথমবার তিনি সাংসদ হন। তার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সেই শরদ পাওয়ারের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ উঠল প্রফুলের বিরুদ্ধে। আরও পড়ুন-পাবজি থেকে ভারতীয়র প্রেমে পাকিস্তানের মহিলা, নেপাল সীমান্ত দিয়ে চার সন্তানকে নিয়ে নয়ডায় প্রেমিকের কাছে এলেন পাক প্রেমিকা
প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির পর তিনিই দেশের ফুটবলের সিংহাসনে বসেছিলেন প্রফুল প্যাটেল। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২, দীর্ঘ ১৩ বছর দেশের ফুটবলের প্রধান ছিল প্রফুল। কংগ্রেস, বিজেপি সব আমলেই ফুটবল মানেই প্রফুল। তার বিরুদ্ধে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা AIFF-র সভাপতি থেকে গিয়েছেন। কেন্দ্রে বহুবার মন্ত্রী হয়েছেন। সামলাছেন অসমারিক বিমান চলাচল মন্ত্রকের মত গুরুত্বপূর্ণ দফতরও। লোকসভা, রাজ্যসভা-দু কক্ষেরই সদস্য হয়েছেন।
টুইট বার্তায় শরদ পাওয়ার এই নিয়ে লেখেন, "জাতীয়তাবাদীর জাতীয় সভাপতি হিসেবে আমি নির্দেশ দিলাম দলবিরোধী কাজের অপরাধে সুনীল টাটকারে ও প্রফুল প্য়াটেলের নাম এনসিপি দলের নথিভুক্ত সদস্য থেকে বাদ দেওয়া হোক।" সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হতে চলেছেন প্রফুল প্যাটেল।
দেখুন শরদ পাওয়ারের টুইট
Sharad Pawar, National President of Nationalist Congress Party (NCP) orders the removal of the names of Sunil Tatkare and Praful Patel from the Register of Members of NCP Party for "anti-party activities". pic.twitter.com/lrUAoDhU5o
— ANI (@ANI) July 3, 2023
ক দিন আগে অজিত পাওয়ারকে দলের কোনও বড় দায়িত্ব না দিয়ে মেয়ে সুপ্রিয়া সুলে আর অত্য়ন্ত ঘনিষ্ঠকে প্রফুলকে এনসিপি-র কার্যকরী সভাপতি করেন শরদ পাওয়ারকে। ক দিন আগে পটনায় বিরোধীদের মহাবৈঠকে দেখা গিয়েছিল প্রফুল প্য়াটেল-কে। সেই প্রফুল রাতারাতি কীভাবে শিবির বদল করলেন, তা নিয়ে অবাক সবাই। অজিত পাওয়ার দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলছিলেন। শরদ পাওয়ারের ভাইপোর মুখে বিজেপি বিরোধী কথা প্রায় শোনাই যেত না। কিন্তু দেশের ফুটবলের এক সময়ের সর্বময় কর্তা প্রফুল ক দিন আগেও নরেন্দ্র মোদীকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন।
তবে এখনও তার ভাইপো অজিত পাওয়ারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিলেন না শরদ পাওয়ার। অজিত পাওয়ার দলের অন্তত ৩৫ জন বিধায়ক নিয়ে এনডিএ-তে যোগ দিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এনসিপি-র গৃহযুদ্ধে মারাঠা রাজনীতিতে ভূমিকম্প। অজিতের দাবি দলের সবাই তার সঙ্গেই আছেন। এনসিপি ২৪ বছরের দল হয়ে গিয়েছে, এবার দলের তরুণদের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে আনা উচিত।
শরদ না অজিত, কোনও পাওয়ারের কাছে এনসিপি-র দখল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শরদ পাওয়ার তার দলের বিদ্রোহীদের নিয়ে তোপ দেগেছেন। দলের নিচুতলায় অজিত পাওয়ারকে নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্য়ে শরদ পাওয়ারের মেয়ে তথা এনসিপি-র কার্যকরী সভাপতি সুপ্রিয়া সুলে চিঠি লিখলেন তার বাবাকে।
এনসিপি-র প্রধান শরদ পাওয়ারকে চিঠি লিখে সুপ্রিয় সুলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কার্যকরী সভাপতি প্রফুল্লু প্যাটেল ও সাংসদ সুনীল টাটকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বললেন। তবে দাদা অজিত পাওয়ার, ও তার সঙ্গে মহারাষ্ট্রে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া দলের ৯ জন নেতাকে নিয়ে চিঠিতে কিছু লেখেননি সুপ্রিয়া সুলে।