Quit India Movement

কলকাতা : “ভারত ছাড়ো আন্দোলনের” আজ ৮১তম বর্ষপূর্তি। এই আন্দোলনটি 'আগস্ট আন্দোলন' বা 'আগস্ট বিপ্লব' নামেও পরিচিত। এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট। মহাত্মা গান্ধী (Mahatma Gandhi) এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (Indian National Congress) এই আন্দোলন শুরু করে। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে আজকের তারিখে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। মহাত্মা গান্ধী ভাষণে বলেন "করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে" (করব না হয় মরব)।

‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’ (Quit India Movement) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, যা দেশে নতুন মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আন্দোলনটি স্বাধীনতার লড়াইয়ে দেশ জুড়ে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক ভারতীয়কে একত্রিত করেতে সক্ষম হয়। আগস্ট মাসে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে ‘ভারত ছাড়ো’ স্লোগান দেওয়া হয়। কংগ্রেস ও মহাত্মা গান্ধীর চিন্তাধারা অনুযায়ী মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদেরকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে স্বাধীনতা দিতে এবং স্বদেশে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। ভারতীয় জনমতকে জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল এই আন্দোলন, এটি ব্রিটিশদের দেখিয়েছিল যে দেশের জনগণ তাঁদের স্বাধীনতা অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আরও পড়ুন : No Confidence Motion : কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনাস্থা নিয়ে সোনিয়া গান্ধীকে এমনটাই বললেন বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে

'ভারত ছাড়ো আন্দোলন' সফল করার জন্য প্রত্যেককে নিয়মে আবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন ছিল। একটা আদর্শের সঙ্গে একমত হয়ে ব্রিটিশদের দেশ থেকে সম্পূর্ণরূপে তাড়ানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এই কারণেই মহাত্মা গান্ধী দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং কর্মজীবী গোষ্ঠীকে আন্দোলন সম্পর্কে আলাদা আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বলা হয়-  সরকারি কর্মচারীদের তাদের চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত নয়, বরং তাদের কংগ্রেসের প্রতি আনুগত্য দেখানো উচিত।

সৈনিককে সেনাবাহিনীতে থাকতে বলা হয়, তবে স্বদেশীদের উপর গুলি চালাতে না করা হয়।

আরও বলা হয়, জমির মালিকরা ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে হলে কৃষকদের নির্ধারিত খাজনা দিতে হবে, যদি তারা ব্রিটিশ সরকারের সমর্থক হয় তাহলে তা দিতে অস্বীকার করবেন।

রাজ্যের রাজপুত্রদের বলা হয় জনগণকে সমর্থন করতে এবং তাঁদের সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন কেন শুরু হয়?

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। জাপান ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল, তাদের বাহিনী উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দখল করছিল। এদিকে ব্রিটিশরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তাদের অধিকৃত এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। এর ফলে ভারতীয় জনগণ ব্রিটিশ শাসনের প্রতি তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলে। জনগণ বিশ্বাস করেনি যে ব্রিটিশরা তাদের জাপানের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যুদ্ধে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো যুদ্ধ সংক্রান্ত অসুবিধার কারণে জনসাধারণও ক্ষুব্ধ ছিল। ক্রিস্প মিশন ভারতের সমস্যার কোনো ধরনের সাংবিধানিক সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়। এ কারণে কংগ্রেসকে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দেয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব 

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রতিবাদে পরদিনই ব্রিটিশ সরকার মহাত্মা গান্ধী, পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মতো বড় নেতাদের গ্রেফতার করে। এর পর আন্দোলনের দায়িত্ব এসে পড়ে জয়প্রকাশ নারায়ণ ও রাম মনোহর লোহিয়ার মতো তরুণ নেতাদের কাঁধে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য এক লাখেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটিশ সরকার আন্দোলনকারীদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়, লাঠিচার্জ করে। নারী ও শিশুরাও রেহাই পায়নি। এই আন্দোলনের সময় ব্রিটিশদের গুলিতে প্রায় ১০,০০০ মানুষ মারা যায়। তবে এতকিছুর মধ্যে ভালো বিষয় হল, ব্রিটিশদের বহুরকম কৌশল সত্ত্বেও ভারতীয়দের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধেনি।

উল্লেখ্য, সুভাষ চন্দ্র বসু (Subhas Chandra Bose) সেই সময়ে ভারতীয় জাতীয় বাহিনী গঠন করেছিলেন এবং তিনি দেশের বাইরে থেকে আজাদ হিন্দ সরকার পরিচালনা করছিলেন।